|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দুবাইয়ে জলবায়ু সম্মেলনে ঘুরে ঘুরে অভিযোগ করছেন বাংলাদেশি ২ কিশোরী
প্রকাশের তারিখঃ ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে চলছে ২৮তম জলবায়ু সম্মেলন। এখানে এসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নানান অভিযোগ করছে গাইবান্ধার বাটিকামারির দুর্গম চরের ফ্রেন্ডশিপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী বিউটি আক্তার।
তার অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে ঘর ডোবানো বন্যা তাদের জীবনকে দুঃসহ করে দিয়েছে।
বিউটি কখনো কথা বলছেন জলবায়ু সম্মেলনের কোনো না কোনো মঞ্চে, আবার কখনো বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। দাবি তুলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশকে এখনি দিতে হবে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, কমাতে হবে জলবায়ুর দূষণও।
ইংরেজিতে তেমন কথা বলতে না পারা এই কিশোরী কথা বলছেন নিজের আঞ্চলিক ভাষায়ই, তবে তার বক্তব্য অনুবাদ করে দিচ্ছে অন্য একজন বাংলাদেশি তরুণ।
বিউটি আক্তার বাংলাভিশনকে বলেন, আমাদের গাইবান্ধায় প্রতিবছর বন্যা আসে। বন্যায় আমাদের সব ভাসিয়ে দেয়। আমাদের সব স্বপ্ন নষ্ট করে দেয়, সম্পদও নষ্ট করে।
এই বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে আমি আমার জন্মভিটা হারিয়েছি। আমার বাবা নিঃস্ব হয়েছেন। এসব দুর্যোগের কারণে বাল্য বয়সেই আমার অনেক বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। আমি মনে করি এগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। আর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত বিশ্ব।
বিউটি আরও বলেন, আমি গাইবান্ধা থেকে দুবাই এসেছি আমার ক্ষতিপূরণ চাইতে। আমার জন্য নিরাপদ জলবায়ু চাইতে। আমি ইংরেজি ভালো বুঝিও না, ভালো বলতেও পারি না। কিন্তু সেজন্য থেমে থাকবো কেন। আমি আমার অভিযোগ আমার নিজস্ব ভাষায়ই বলছি।
সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলায়ই আমার কথা নিয়েছে। স্যারের (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা) আমার কথা অনুবাদ করে দিচ্ছেন। এভাবে আমি আমার দেশের মানুষের কষ্ট তুলে ধরছি।
বিউটি ছাড়াও দেশের বন্যাকবলিত আরেক জেলা কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নাওশালা ফ্রেন্ডশিপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী রনজিনা আক্তার।
তিনি বলেন, গেল বছর যে বন্যা হলো সেই বন্যায় আমার বাড়িঘর সব ডুবে গেছে। আমার বই-খাতা সব নষ্ট হয়ে গেছে। বহুদিন স্কুলে যেতে পারিনি। আমার বাবার সব সম্পত্তি নষ্ট হয়ে গেছে। জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের কী দোষ, যে বার বার আমরা শুধু ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো?
রনজিনা আরও বলেন, আমরা দোষ না করেও শাস্তি পাচ্ছি। অথচ উন্নত দেশগুলো আরাম করছে। আমি ক্ষতিপূরণ চাইতে এসেছি এবং জলবায়ুর দূষণ বন্ধ করে আমাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে এসেছি।
বিউটি ও রনজিনাকে দুবাইয়ের জলবায়ু সম্মেলন পর্যন্ত নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূলের শিশু-কিশোরদের কষ্টগুলো বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতেই এই দুই ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরীকে দুবাই আনার ব্যবস্থা করেছেন তারা।
বিউটি-রনজিনার কথা অনুবাদ করছিলেন ফ্রেন্ডশিপের তরুণ কর্মকর্তা সৈয়দ ওসামা দোজা। তিনি বলেন, তারা দুজন বিভিন্ন ফোরামে গিয়ে কথা বলছে। আমি তাদের বক্তব্যগুলো তুলে ধরছি এবং আমি এতে গর্ববোধ করছি। কারণ আমার ভাষা হয়ে একজন তৃণমূল জলবায়ু উদ্বাস্তু তার কষ্ট তুলে ধরতে পারছে। আমি মনে করি ক্ষতিগ্রস্তরা কথা বলার সুযোগ পেলে জলবায়ু আন্দোলন আরো বেগবান হবে।
ফ্রেন্ডশিপ জলবায়ু বিভাগের প্রধান কাজী এমদাদুল হক বলেন, প্রতিবছর জলবায়ু সম্মেলনে বহু এক্টিভিস্ট ও দুষণকারীদের পক্ষের লোকজন আসে। কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা আসতে পারে না, অথচ তাদেরই বলার অধিকার বেশি। তাই আমরা এই দুই কিশোরীকে দুবাই আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা মনে করি ভাষা কোনো বাধা নয়। এবং এই দুই মেয়ে সেটা প্রমাণ করেছে।
দুবাইয়ে চলমান ২৮তম জরবায়ু সম্মেলনের প্রথম ভাগে লস এন্ডড ড্যামেজ ফান্ডে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। তবে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো এই ক্ষতিপূরণ কোনো মাধ্যমে এবং কী পরিমাণ পাবে সেটির সুরহা এখনো হয়নি। তবে আজ শুরু হওয়া সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের আলোচনা কতটুকু সুফল বয়ে আনবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.