|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
নওগাঁ দক্ষিণ কালীতলা আরতী রানী নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার ১৯৭১ সালে কাহিনী কথা:
প্রকাশের তারিখঃ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
নওগাঁ শহরের দক্ষিণ কালিতলা মহল্লার শিক্ষিতা, সুন্দরী আরতী রাণী সাহা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর আহবানে দেশমাতৃকার নিবিড় টানে নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবে কোলকাতায় স্থাপিত মুজিবনগর সরকার, আওয়ামী লীগের জাতীয় নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর পরিচালনায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান এবং ১ম ব্যাচে রাজশাহীর জিনাতুন্নেছা তালুকদার ও তুষার কণা মন্ডল, রাজবাড়ীর গীতা কর ও ইরা করসহ আরো অনেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন।
এরপর পাঠানো হলো ত্রিপুরার আগরতলায় বিশ্রামগঞ্জে জনৈক হাবুল ব্যনার্জীর বাগান বাড়ীতে গড়ে তোলা বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালে। সাথে ছিলেন অনিলা বিশ্বাস, মঞ্জুলা চৌধুরী, ছায়া হালদার, গীতা মজুমদার, সুলতানা কামাল, নিলিমা বৈদ্য, কামনা চক্রবর্তী, খুকু আক্তার, টুলু আক্তার আদমদিঘীর নিমাই মন্ডল সহ বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা । তত্ত্বাবধানে ছিলেন ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা.নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ডা.ক্যাপ্টেন সেতারা ও ডা.ক্যাপ্টেন আক্তার।এই গর্বিত অংশের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আরতীর জীবনে নেমে আসে অমানবিক কিছু পর্ব। সংক্ষেপে-
অজস্র ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে হলো পরাধীন। বিয়ের পর হারালেন পদবী। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতার প্রাপ্ত বেতনের সম্পূর্ণ অর্থ স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে হারালেন আর্থিক ক্ষমতা। স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন, বঞ্চনা ব্যভিচারপনায় হারালেন সংসার। সেবাহীন আর সবার অবজ্ঞায় সবকিছু হারিয়ে হলেন নিঃস্ব। বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বীকৃতি না পেয়ে হারালেন অহংকার।
আরতী রাণী সাহার কাছে সবচেয়ে পীড়াদায়ক ছিল- প্রায় ৫০ বছর বহু আবেদন নিবেদন করার পরও তাঁর শ্রেষ্ঠ অহংকার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভূত করে স্বীকৃতি না দেয়া। যাচাই-বাছাই আর শেষ হয় না।
সর্বশেষ ২০২০ সালের শেষদিকে জেলা প্রশাসক, দিনাজপুরের কার্যালয়ে শুনানীর জন্য দিন ধার্য হয়েছিল। সেখান থেকে আরতী রাণী সাহা নিরাশ ও হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।একদিকে তাঁর মহান ত্যাগকে উপেক্ষা, অন্যদিকে মানবেতর জীবন যাপনসহ মৃত্যুর প্রহর গুনা। এরকম অবস্থায় 'হারাবার আর কিছু নেই' ভাবনা থেকে শেষ চেষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহৃদয় ও মানবিকতার মহান দৃষ্টান্ত জানা থাকায় আরতী রাণী সাহা প্রয়োজনীয় রেকর্ড পত্র সহ নভেম্বর/২০২০-এ সরাসরি আবেদন করেন। দ্রুতই ডাক পড়ে ঢাকায় জামুকাতে। যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে আরতীর ছেলে হিমেল সাহা ঢাকায় গমন করে এবং ২৪/০২/২০২১ তারিখে প্রকাশিত গেজেটে তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।আমরা জানি না মাত্র পঞ্চাশ দিনে কীভাবে কাজটি সমাধা হয়েছে! তবে ধারনা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহৃদয় হস্তক্ষেপের কারণে আরতী রাণী সাহার বিজয় অর্জিত হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। ইস্পাতদৃঢ় লড়াই-সংগ্রামে ১৯৭১ সালে বর্বর পাক বাহিনীকে পরাজিত করে ও সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতায় বাঙ্গালী জাতির সাথে যে আনন্দ উল্লাসে মেতেছিল ২০২১ সালে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলায় আরতী রাণী সাহার আবারও সেই আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠার উপলক্ষ তৈরী হয়। বীর মুক্তি যোদ্ধা আরতি রানী সাহা নওগাঁর অহংকার, আমাদের গর্ব। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি এ বীর সেনানী আরতী দিদিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। নিরন্তর শুভকামনা। আরতী রাণীর ভ্রাতা অজয় সাহার ওয়াল ।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.