সাভারে বিরুলিয়া রোড় ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকদের কাছ থেকে মাসে প্রায় ৭ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। বছর হিসাবে এটির পরিমাণ ৮৪ লাখ টাকা। চাঁদার এ টাকার ভাগ পাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে বিরুলিয়া ইউনিয়ন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান সেলিম মন্ডল।
ফুটপাতের ও সড়কে একাধিক ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও চাঁদা আদাকারীদের (লাইনম্যান) সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলছেন,প্রায় চার কিলোমিটার সড়কটিতে অন্তত ৮০০-১২০০ অটোরিকশা চলাচল করে। এসব একেকটি রিকশা থেকে দিনপ্রতি ১০ টাকা করে তোলা হয়। টাকা তোলার জন্য দুই স্টপেজে ৪ জন কর্মী কাজ করে। তারা টাকা নিয়ে মার্কার কলম দিয়ে অটোরিকশা চিহ্নিত করে দেয়। এছাড়া সড়কের ওপরে থাকা হালিম, চটপটি ও চায়ের দোকান থেকে দিনপ্রতি নেওয়া হয় ১০০-২০০ টাকা করে।
ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও লাইনম্যানদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজি চক্রের মূলে রয়েছেন আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগনেতা সহ বিরুলিয়া ইউনিয়ন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান সেলিম মন্ডল। তাঁদের মধ্যে প্রধান হচ্ছেন সাভার পৌর ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুবেল মন্ডল। লাইনম্যানরা তাঁর কাছেই চাঁদার টাকা জমা দেন।
আরো এক জন হচ্ছেন বিএনপি নেতা সোহেল রাজ রানা (ন্যাংড়া সোহেল)। সন্ত্রাসী বাহিনী ও কিশোর গ্যাং দিয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়া এবং ভয় দেখিয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য করাই তাঁদের কাজ।
এ তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন সোহেল নামের আরেক ব্যক্তি। ব্যবসায়ী ও চালকদের কাছে তিনি মাছ ব্যবসায়ী সোহেল হিসেবে পরিচিত। চাঁদার টাকায় ভাগ পায়, তা সোহেল কাছে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী,গাড়িচালকদের ও লাইনম্যানেরা।
অটোরিকশার একাধিক চালক এ চাঁদা দেওয়ার কথা জানান। তবে তারা কি কারণে চাঁদা দিচ্ছেন তা জানেন না। এমনকি চাঁদা দিয়ে কোনো রসিদও পাননি বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘আগে তো চাঁদা নিত না। এখন নিতেছে। টাকা না দিলে সমস্যা করবো। তাই দিতাছি।’
আরেক চা দোকানদার বলেন, ‘সোহেল রাজ রানার (ন্যাংড়া সোহেল)ও রুবেল মণ্ডলের লোকেরা চাঁদা তুলছে। না দিলে ঝামেলা করে। তাই টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছি।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাভার পৌরসভা সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মণ্ডল বলেন, ‘এটা হচ্ছে ইজারাদার নিয়েছে আব্দুল আলীম সোহাগ ওরফে সুলতান ভাই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে দেখাশোনা করা।’
এ বিষয়ে আব্দুল আলীম সোহাগের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এখান থেকে কোনো ইজারা পাইনি। চাঁদা বাজি করার তো প্রশ্নই উঠে না। আমার নাম যারা ব্যবহার করে এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো৷ এ ছাড়াও আমাদের পুলিশের টহল দল আছে, তাদের সামনে বিষয়টি পরলে তারা চাঁদাবাজদের আটক করবে।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, বিষয় টা আমার জানা নেই। তবে আমরা সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিবো।