|| ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ,স্বামীর স্বীকৃতি চান ধর্ষিতা তাসলিমা
প্রকাশের তারিখঃ ২৫ মে, ২০২৩
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রেমের ফাঁদে পরে সর্বস্ব হারিয়ে স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে প্রশাসন ও নেতা কর্মীসহ মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে কোন বিচার না পেয়ে অবশেষে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছেন তাসলিমা আক্তার (৩৩) নামে এক নারী।
গত ২১ মে রোববার কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক মো. রেজাউল করিম আগামী ২৩ জুলাই-২০২৩ ইং তারিখের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাজিতপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের হামিদ উদ্দিন রোডের পশ্চিম বসন্তপুর মহল্লার ব ৫১ হোল্ডিং এর বাসিন্দা মো. আব্দুল আওয়াল ও রোকেয়া আক্তার খাতুনের ছেলে এবং শিরীন আক্তারের স্বামী বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ওই নারীর পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এ অবস্থায় গত ৫ মার্চ বিকালে মামুন ওই নারীর বাড়িতে এসে আলাপচারিতার একপর্যায়ে মুখে চেপে ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। সে সময় বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন ওই নেতা মামুন।
এ ঘটনার পর ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন মামুন। পরে ওই নারী তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে মৌলভী ডেকে এনে সুরা পড়িয়ে তাকে বিয়ে করেছেন বলে আশ্বস্ত করায়। তবে বিয়ের কাবিনের কথা বললে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মামুন। পরে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানান ওই নারী।
এরপর ওই নারী গত ২১ মে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী) ২০০৩ এর ৯ (১) ধারায় কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার (২৫মে) দুপুর ১টার দিকে অভিযোগকারী তাসলিমা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে ৪-৫ বছর আগে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় তার। এ পরিচয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার বাড়িতে এসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে মামুন। আওয়ামী লীগের বড় নেতা দাবী করে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করেছে বলে জানান ওই নারী। যখন তাকে বিয়ে করার কথা বলা হয় তখন মামুন তার পরিচিত একজন মৌলোভী ও কতক স্বাক্ষী সাথে নিয়ে এসে ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে কালিমা পড়িয়ে বিয়ে করেছে বলে শান্তনা দেয় তাকে। এর পর তাকে একটি স্বর্ণের চেইন, স্বর্ণের কানের দুল, একটি খাটসহ আসবাবপত্র কিনে তার নানার বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে রেখে স্ত্রীর মতো ব্যাবহার করে তার সাথে সংসার করতে থাকে মামুন। যখন বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করার কথা বলা হয় তখন থেকেই ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে মামুন। গত ৬ এপ্রিল ওই নারীকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেওয়ায় ওই নারী বাদী হয়ে পরদিন ৭এপ্রিল আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বাজিতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারন ডায়েরি নং- ২৯১।
এছাড়া গত ১৬ মে একটি সমাধানের কথা বলে ওই নারীকে বাজিতপুর সিনেমা হলের পিছনে ডেকে নিয়ে নির্মম ভাবে মারধোর করে মামুন। পরে স্থানীয়রা ওই নারীকে আহত অবস্থায় বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। ওই নারী আরো বলেন, আমি আমার স্বামীর স্বীকৃতি চাই, স্ত্রীর মর্যাদা চাই। তা না হলে প্রতারণা করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আমাকে ধর্ষণ করার কঠিন বিচার চাই।
এব্যাপারে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কিশোরগঞ্জ পিবিআই'র পুলিশ সুপার মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনার কাগজ এখনও পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এ ব্যাপারে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.