|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
গাজীপুরে ক্লুলেস হাতা মামলার রহস্য উদঘাটন প্রেমিকা নিয়ে বিরোধ কিশোরগ্যাং গ্রুপের নির্মমতার বলি সিয়াম ,গ্রেফতার ৬ -DBO-news
প্রকাশের তারিখঃ ৭ মে, ২০২৩
প্রেমিকা নিয়ে বিরোধের জের হিসেবে গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার ফনিরটেকে কিশোর গ্যাং এর হাতে নির্মমভাবে সিয়াম খুনের জট খুলেছে জিএমপি পুলিশ। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে তারা এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে ৬ কিশোরকে।
পুলিশ সূত্র জানায়- গত ইং ২৭/০৪/২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ১২.৩০ ঘটিকায় সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী সাকিনস্থ ফণিরটেক এলাকার নিরিবিলি মাঠের পূর্ব পাশে ধানক্ষেতের কাছে ১৮-২০ বছর বয়সের ০১ (এক) টি ছেলের লাশ পাওয়া যায়। সংবাদ পেয়ে সদর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। লাশের হাত, পা, গলা, মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা এবং মুখমণ্ডলসহ লাশের সারা শরীরে কাটা রক্তাক্ত জখম থাকায় লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় পরিচয় উদঘাটনের জন্য উপস্থিত লোকজনসহ আশেপাশের লোকজনদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে লাশের পরিচয় পাওয়া যায়, সে জিএমপি সদর থানাধীন ছোট দেওড়া সাকিনস্থ মোঃ সফিকুল ইসলাম (৬৪) এর ছোট ছেলে সিয়াম (২০)। এরই প্রেক্ষিতে সদর থানার মামলা নং ৩৯, তাং ২৮/০৪/২০২৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। ঘটনার পর-পরই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ মনিরুজ্জামানসহ সদর থানার একাধিক টিম রেজওয়ান আহমেদ, পিপিএম অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, অপরাধ (উত্তর) বিভাগ এর নেতৃত্বে আবু তোরাব মোঃ শামসুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ (উত্তর) বিভাগ এর নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যে ক্লুলেস ওই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে। ঘটনায় সরাসরি হত্যায় জড়িত অর্পন সরকার জয় (১৬) কে সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকা থেকে ২৯-০৪-২০২৩ তারিখ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অর্পনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আফিফা (ছদ্মনাম) একটি মেয়ের সাথে ঘটনার মুল পরিপকল্পানাকারী এবং হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী পলাতক আসামী মোঃ আরাফাত (২০) এর দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার ৫দিন আগে আফিফা (ছদ্মনাম) এর আত্মীয়ের বাড়ী সদর থানাধীন ছোট দেওড়া এলাকায় তার বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে গেলে নিহত সিয়াম এর সাথে পরিচয় হয়। তারা নিজেদের মধ্যে ফেসবুক আইডি বিনিময় করে এবং পরবর্তীতে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাট চালাতে থাকে। অন্যদিকে ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারী আফিফা (ছদ্মনাম) এর প্রেমিক আরাফাত তার প্রেমিকার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার আইডি তার মোবাইলে লগইন করে রাখে এতে করে প্রেমিকা আফিফা (ছদ্মনাম) ম্যাসেঞ্জার আইডি দ্বারা যাদের কথোপকথন বা চ্যাট করতো তার বিস্তারিত আরাফাত তার নিজের মোবাইলে দেখতে পেত। এতে আসামী আরাফাত এর চরম ক্ষোভ/আক্রোশ জমতে থাকে এবং পরিকল্পনা করে সিয়ামকে মেরে ফেলার। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬-০৪-২০২৩ তারিখ রাত্রী আনুমানিক ১৯:৩০ ঘটিকার সময় নিহত সিয়ামকে কৌশলে আফিফা (ছদ্মনাম) এর ম্যাসেঞ্জার আইডি থেকে আরাফাত নিজেই তার পরিচয় গোপন করে আফিফা (ছদ্মনাম) সেজে নিহত সিয়াম এর সাথে চ্যাট করে এবং ঘটনাস্থলে এসে তার সাথে দেখা করতে বলে। সদ্য পরিচয় এবং নিজের ভাললাগা থেকে নিহত সিয়াম দেখা করার জন্য নিদৃষ্ট সময়ে উল্লিখিত ঘটনাস্থলে আসলে, আগে থেকে অবস্থান নেয়া হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী পলাতক আরাফাত (২০)সহ (১০/১৫) জনের একটি গ্রুপ আরাফাত এর নির্দেশে তার হাত পা বেধে এলোপাতাড়ি ভাবে চাপাতি, সুইস গিয়ার চাকু ও ছেন দিয়ে কোপাতে থাকে। পরবর্তীতে সিয়াম এর মৃত্যু নিশ্চিত হলে যে যার মত চলে যায়। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে হত্যাকারীরাও উপস্থিত উৎসুক জনতার সাথে মিশে ঘটনাস্থলের সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। পুলিশ প্রথম সরকার জয়কে (১৬) গত ২৯-০৪-২০২৩ তারিখ সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে এবং উক্ত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে ফৌ: কা: ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরবর্তীতে ১। মোঃ সাজ্জাদ হোসেন @ সাজিদ (১৫), ২। মো: হাসিবুর রহমান টুটুল (২১), ৩। রিয়াদ হোসেন মুন্না (১৮) কে ৩০-০৪-২০২৩ তারিখ দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ৪। মোঃ শাকিল (১৯), ৫। মোঃ রাকিব (২২)দ্বয়কে বাঙ্গালগাছ এলাকা থেকে ০৬-০৫-২০২৩ তারিখ গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও ঘটনার সহিত যাকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে সেই প্রেমিকা আফিফা (ছদ্মনাম) ফৌ: কা: ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বাক্ষী হিসাবে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং অপর পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.