|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
গরমে হিটস্ট্রোকে মরে যাচ্ছে মুরগি
প্রকাশের তারিখঃ ২০ এপ্রিল, ২০২৩
তীব্র রোদ–গরমে মরছে মুরগি। অনেক খামারে বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করা হলেও লোডশেডিংয়ের কারণে এই উদ্যোগে কাজে লাগছে না। গরমে হিটস্ট্রোকে মরে যাচ্ছে মুরগি। গতকাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হরিশ্বর কালোয়া গ্রামে।
কুড়িগ্রামে কয়েক দিনের টানা দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। প্রচণ্ড গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। তীব্র রোদ ও গরমে খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। অনেক খামারে বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করলেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এই উদ্যোগে কাজে লাগছে না। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ৯ উপজেলায় লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির খামার রয়েছে ১ হাজার ৪৩২টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামার ২১১টি এবং অনিবন্ধিত খামার ১ হাজার ২২১টি। এসব খামারের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির নিবন্ধিত খামার রয়েছে ১৭৪টি ও অনিবন্ধিত ১ হাজার ১৯টি। এ সম্পর্কে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইউনুছ আলী বলেন, ‘কুড়িগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় আমাদের চিকিৎসকেরা খামারিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে খামারঘরের ছাদ কিংবা টিনের চালার ওপর ভেজা চট দিলে উপকার পাওয়া যাবে। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রচারণা চালাচ্ছি।’
বর্তমানে অতিরিক্ত গরমের কারণে বিভিন্ন খামারে প্রতিদিনই মুরগি মারা যাচ্ছে। সদর উপজেলার চারজন ও উলিপুর উপজেলার একজন খামারি জানান, গত এক সপ্তাহে গরমের কারণে তাঁদের পাঁচ শতাধিক মুরগি মরে গেছে।
গতকাল বুধবার সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের তালুককালোয়া গ্রামের খামারি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২৮ দিন আগে ৩ হাজার ৫০০ ব্রয়লার মুরগি খামারে তুলেছিলাম। বর্তমানে প্রতিটি মুরগি দুই কেজির কাছাকাছি হয়েছে। ঈদের সময় বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে হিটস্ট্রোকে প্রতিদিন মুরগি মারা যাচ্ছে।’ গত মঙ্গলবারও তাঁর খামারের ৩৫টি মুরগি মারা গেছে।
হরিশ্বর কালোয়া গ্রামের খামারি মেহেদি হাসান বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরম। এ কারণে মুরগির হিটস্ট্রোক শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। কোনোভাবেই হিটস্ট্রোক থেকে মুরগিকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সব সময় ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান কোথায় ঠেকবে, বলা মুশকিল।’
পোলট্রিখামারিরা বলছেন, শুধু হিটস্ট্রোক নয়, অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে ব্রয়লার মুরগির পাতলা পায়খানা দেখা দিয়েছে। এতে আক্রান্ত মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ছে। নিয়মিত টিকা ও ওষুধ দিয়েও এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলেনি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কেউ কোনো ধরনের পরামর্শ দিতেও আসেননি।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, গরমে পোলট্রি মুরগির হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি একটু বাড়ে। ব্রয়লার মুরগির পাতলা পায়খানার বিষয়টি অন্য কারণে হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে খামারিরা তাঁদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করেননি। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে তাঁরা প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গত সোমবার কুড়িগ্রামে এ সপ্তাহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার বেলা ৩টায় কুড়িগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ রকম দাবদাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.