|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
নিজারা ছাড়াই সড়কে “টোল আদায়: DBO-NEWS
প্রকাশের তারিখঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৩
ঢাকার সাভারে ইজারা ছাড়াই বিরুলিয়া-আক্রাইন সড়কে টোল আদায়ের খবর পাওয়া গেছে। তবে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার নির্দেশ অনুযায়ী, ‘এসব সড়কে টোল আদায় অবৈধ।’
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় চার কিলোমিটার সড়কটিতে অন্তত ৭০০-৮০০ অটোরিকশা চলাচল করে। এসব একেকটি রিকশা থেকে দিনপ্রতি ১০ টাকা করে তোলা হয়। টাকা তোলার জন্য দুই স্টপেজে ৪ জন কর্মী কাজ করে। তারা টাকা নিয়ে মার্কার কলম দিয়ে অটোরিকশা চিহ্নিত করে দেয়। এছাড়া সড়কের ওপরে থাকা হালিম, চটপটি ও চায়ের দোকান থেকে দিনপ্রতি নেওয়া হয় ১০০-২০০ টাকা করে।
শুক্রবার বিকেলে এভাবেই অটোরিকশা থেকে টাকা উত্তোলন করছিলেন স্থানীয় ইমান্দিপুরের বাসিন্দা দুই যুবক সোহেল ও সাকিন।
টাকা তোলার কারণ জানতে চাইলে তারা জানায়, গত ১৩ এপ্রিল থেকে ছাত্রলীগের সাভার পৌরসভা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মণ্ডলের নির্দেশে ও সোহেল রাজ রানার (ন্যাংড়া সোহেল) কথায় তারা অর্থ উত্তোলন করছে।
অভিযোগ আছে, সড়কে চলন্ত ট্রাক, মিনি ট্রাক থেকেও একইভাবে অর্থ আদায় করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি এমন একটি চলন্ত ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায়কালে সেখানে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে চাঁদা উত্তোলনকারীরা স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তারা চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করে।
অটোরিকশার একাধিক চালক এ চাঁদা দেওয়ার কথা জানান। তবে তারা কি কারণে চাঁদা দিচ্ছেন তা জানেন না। এমনকি চাঁদা দিয়ে কোনো রসিদও পাননি বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘আগে তো চাঁদা নিত না। এখন নিতেছে। টাকা না দিলে সমস্যা করবো। তাই দিতাছি।’
আরেক চা দোকানদার বলেন, ‘সোহেল রানা ও রুবেল মণ্ডলের লোকেরা চাঁদা তুলছে। না দিলে ঝামেলা করে। তাই টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছি।’
সড়ক-মহাসড়কে চাঁদা আদায় নিষিদ্ধ
এদিকে সড়কটিতে এ টোল আদায় অবৈধ বলে জানা গেছে। গত ৩০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক সাক্ষরিত এক নির্দেশে বলা হয়, টার্মিনাল ছাড়া অন্য সকল সড়ক মহাসড়কে চাঁদা/টোল আদায় অবৈধ।
এটি বন্ধে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার মেয়রকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া গত ৩১ জানুয়ারি সাভার পৌরসভার যে ইজারা তালিকা দেওয়া হয়েছে সেখানেও সড়ক/মহাসড়কে চাঁদা/টোল আদায় করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়।
৮ ফেব্রুয়ারি সাভার পৌরসভার মেয়রের আরেক নির্দেশনায় বলা হয়, পৌরসভা থেকে সড়ক, মহাসড়কে কোনো ইজারা দেওয়া হয় না ও চাঁদা আদায় করা হয় না।
যা বলছেন অভিযুক্তরা
চাঁদা তোলার নির্দেশদাতা সোহেল রাজ রানা বলেন, ‘রাজাশনের টেন্ডার আমার নামে না, রুবেল মন্ডল আছে, সে নিয়েছে।’
টোল তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তুলেন বলতে কেমন শোনা যায়, আমি তো ওইটার ভেতর কিছু না। আমার সাথে তো কোনো লেয়াজু নাই ওই টার, রুবেল মন্ডল ঐ টেন্ডার নিয়েছে। আমি যত টুকু জানি এটা রুবেল মন্ডল নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাকে অনেকেই ফোন করতেছে। ভাই আপনি ওই টা করছেন এইটা করছেন। থানা থেকে ফোন আসতেছে। আমি পেরাশেনিতে আছি এটা নিয়ে।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাভার পৌরসভা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মণ্ডল বলেন, ‘এটা হচ্ছে ইজারাদার নিয়েছে সুলতান ভাই। আমার দায়িত্ব হচ্ছে দেখাশোনা করা।’
তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা থেকে তো টাকা নেই না। আমরা শুধু গাড়িগুলো থেকে টোল উঠাই। গাড়ির অনুযায়ী টাকা নেয়া হয়, পিকাপ থেকে ২০ টাকা কোনো টা থেকে ৫০ টাকা। টাকা তুলার জন্য ৫/৭ জন কাজ করে। এদেরকে সুলতান ভাই ইজারাদার টাকা দেয় ওদের। ’
সড়ক মহাসড়কে চাঁদা/টোল তোলা বৈধ কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মহাসড়ক থেকে চাদা তুলা যাবে না এই বিষয় সুলতান ভাই বলতে পারবে। আর এটা তো জেলা থেকে নেয়া হয় নাই পৌরসভা থেকে নেয়া হয়েছে। নির্দেশনা দেখেছি। চলাচল রিকশা থেকে টাকা নেয়া হয় না। পৌরসভা থেকে দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কিছুটা জানি। আর এটা তো নিষেধাজ্ঞা না। আর নির্দেশনা আমি অবশ্যই দেখেছি। আপনার সাথে আমি সামনা সামনি কথা বললে ভালো হতো।’
দায়িত্বপ্রাপ্তদের বক্তব্য
সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গনি বলেন, ‘যদি নেয় তাহলে পুলিশে দিয়া দেন, আমাদের চিঠি টা দেইখা জান চিঠির মধ্যে পরিস্কার লেখা আছে কোনো লেনে কোনো সড়কে কোনো জাগায় চাদা উঠানো নিষেধ যদি কেও তুলে ওই বেটারে থানায় নিয়া দেন।’
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এটা জানা নেই, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। আপনি থানা পুলিশকে বিষয়টি জানাতে পারেন। আমাদের টহল পুলিশ থাকে তারা যদি হাতেনাতে ধরতে পারে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.