|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
চকরিয়াজুড়ে এমপি জাফরের দখলবাজি, এবার খাল ভরাট
প্রকাশের তারিখঃ ১২ এপ্রিল, ২০২৩
কক্সবাজারের চকরিয়া জুড়ে চলছে জমি দখলের মহোৎসব। আর এই দখলের নেপথ্যে রয়েছে সরকার দলীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিশেষ একটি বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসহ সরকারি খাস জমি দখল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চকরিয়া বাসটার্মিনালের বিপরীতে অবস্থান ঐতিহ্যবাহী নোনা খাল। বর্ষাকালে পৌর শহরের সব পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হতো। কিন্তু তা এখন কেবল মাত্র স্মৃতি। বর্তমানে খালটি দখল করে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে। প্রায় ৭ একরের এই জমি সরকারি খাস এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের। কিন্তু দখলবাজ চক্র কিছুই তোয়াক্কা না করেই সমানতালে দখল বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয় নাজিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, এখানে পরিবার নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম বর্তমানে এখানে টার্মিনাল করা হবে বলে আমাদের অন্যত্র জমি দেখতে বলেছেন।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, সরকারি জমি দখল করে ভরাট করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এটি খাল ছিল। কে দখল করছে তাও জানতে পেরেছি। তবে দখলকারী যতোই শক্তিশালী হউক শিগগিরই সরকারি জমি উদ্ধার করা হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহে আরেফিন বলেছেন, প্রতিমাসে আমাদের উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। চকরিয়া বাসটার্মিনালের সামনেও সওজ এর জমি যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চকরিয়া স্থানীয় সাংসদের ইশারায় চলে সবকিছু। তিনিই সরাসরি কলকাঠি নাড়েন সবজায়গায়। মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে সড়ক ও জনপথসহ সরকারি ৩ একর জমি হাসপাতালের নামে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন তিনি। ওই জমিতে পার্কভিউ হাসপাতালের নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন রকম বাঁধাই না আসে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সামনে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। এ জন্য আশপাশের জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি বুঝতে পেরে আশপাশের সব জমি সাংসদ বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিনে নেন। দখলে নিয়ে নেন খাস জমিও। যাতে অধিগ্রহণ হলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক জমির মালিক এখনো ন্যায্যা মূল্য পাননি। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী বশির বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি জমি কিনে নিয়েছেন শুনলাম। অধিগ্রহণ হলে সেই টাকা তিনি পাবেন। এদিকে যুবলীগ নেতা কচির যোগসাজশে সাংসদের কবল থেকে রক্ষা পাইনি বিশেষ একটি বাহিনীর জমিও। তবে তার দখল পাঁয়তারা নস্যাৎ করে দেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এতে সাংসদ তোপের মূখেও পড়েন বলে জানা গেছে।
সাংসদের আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন চকরিয়া সাহারবিলের চেয়ারম্যান নবী হোসেন। সাংসদের নির্দেশে চেয়ারম্যান নবী হোসেন ৪টি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে বলেও অভিযোগ উঠে। এছাড়া বরইতলীতে পহরচাদায় ৩টি পাহাড়ও বাদ যায়নি সাংসদের নজর থেকে। বর্তমানে পাহাড় ৩টি সমানতালে কেটে সমতল করা হচ্ছে।
এছাড়া ইজারা না নিয়ে জোরপূর্বক ডুলহাজারা, ফাঁসিয়াখালী ও খুটাখালী গরু বাজার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী ইউএনও'র কাছ থেকে সরকারিভাবে গরু বাজারগুলো ইজারা নেওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি নামমাত্র কাগজ নিয়ে গরু বাজার চালিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে খুটাখালী গরুবাজার নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কথিত ইজারাপত্র ইস্যু করেনি। প্রতিরাতে মিয়ানমারের চোরাই গরু মজুদ হয় এসব বাজারে। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। স্থানীয়দের অভিমত, চকরিয়ায় এমপি জাফরের দখলবাজি সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ করা যাবে না। লেখাও যাবে না। উল্টো খালি হবে কলমের কালি।
এসব অভিযোগ নিয়ে সাংসদ জাফর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া না পাওয়ায় তাঁর ব্যক্তিগত সহকারি আমিনের মোবাইলে কল দেওয়া হয়। আমিন জানালেন, আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র। একটি মহল সংসদ সদস্য জাফর আলমের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আগামী শুক্রবার সাংসদের দেখা মিলবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.