ছাত্রী তোলার দুই মাস পরেও দুর্ভোগ কমেনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১৮ নং ছাত্রী হলের। লোকবল সংকট, লিফটে কারিগরি ত্রুটি, শব্দ দূষণ, ডাইনিং-ক্যান্টিন সমস্যা যেনো পিছুই ছাড়ছে না ছাত্রীদের। পর্যাপ্ত পরিমান লোকবল না নিয়েই খোলা হয়েছে ছাত্রীদের নতুন হল ।
হল অফিস সূত্রে জানা যায়, একজন হল সুপার, ৬ জন ক্লিনার ও ৫ জন সুইপার।
প্রত্যেক তলায় দুইটি করে ব্লক রয়েছে। প্রত্যেক ব্লকে ৬টি গোসলখানা, ৫টি টয়লেট এবং ওযুখানা রয়েছে। ১০ তলা ভবনে হলের ভেতরে কাজ করার জন্য সুইপার রয়েছে মাত্র ৩ জন। ৩ জনের কাধে প্রায় ১০৮ টি গোসলখানা, ৯০ টি টয়লেট এবং ওযুখানা পরিষ্কার করার দায়িত্ব রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লোক সংকট থাকায় ২ থেকে ৩ দিন পর পর পরিষ্কার করা হয় গোসলখানা এবং টয়লেট। এতে ছাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুকিও বাড়ছে। হলের কিছু জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমতে থাকে। এ কারনে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। মেয়েদের প্রতিটি হলে দুই জন করে হল সুপার নিয়োগ দেওয়া হলেও নতুন হলে রয়েছে একজন মাত্র হল সুপার। নেই কোনো হাউস টিউটরও। প্রভোস্ট এবং ওয়ার্ডেনের উপর বর্তেছে ১০ তলা হল পরিচালনার চাপ।
বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে জেনারেটরের সংযোগ প্রদান করাও হয় না। ১০ তলা পর্যন্ত হেটে উঠতে দেখা যায় মেয়েদের। এছাড়াও রাত ১০ টার পর হলের লিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায় ছেলেদের হলে রাত ১০ টার পরেও লিফট চলাচল করে।
নতুন হলে গ্যাস না থাকায় ডাইনিং চালু করা হয় নি। হলে রয়েছে একটি ক্যান্টিন। ডাইনিং না থাকায় উচ্চ মূল্যে নিম্ন মানের খাবার খেতে এক প্রকারে বাধ্য হচ্ছে ছাত্রীরা। দেখা যায় হলে কিছু খাবারে দাম বটতলার খাবারের থেকেও বেশি। ভাত ১০ টাকা, হাফ ভাত ৭ টাকা, ডিম ২২ টাকা, ভর্তা ৬ টাকা, ডাল ৬ টাকা। অন্যান্য হলে ছাত্রীরা ৩০ টাকায় ডাইনিং এ খেতে পারে। সে জায়গায় এ হলের ছাত্রীদের এক বেলার খাবারে কখনো ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিল চলে আসে। খাবারের মান নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। নষ্ট খাবার দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এ ক্যান্টিনের বিরুদ্ধে। রোজার সময় সাহরিতে বন্ধ থাকে ক্যান্টিন। রাত ১০ থেকে ১১ টার মধ্যে রুমে খাবার এনে রাখতে হয়। সেটি খেয়েই রোজা রাখছে শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় সংরক্ষিত খাবার নষ্টের অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়াও হলটি হাইওয়ের একদম সংলগ্ন হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যানবাহনের শব্দে উত্তর দিকের রুম গুলোয় থাকাই যেনো দায় হয়ে যাচ্ছে। রাতেও নিস্তার পাওয়া যায় না এ শব্দ থেকে। পড়াশোনা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের।
দর্শন বিভাগের ৪৮ ব্যাচের কনিকা বলেন, ক্যান্টিনের খাবারের মান খুবই নিম্নমানের। আমি ছোট মাছ থেকে পোকা পেয়েছি৷ ক্যান্টিনে শাক রান্না করে ভালো মতো না ধুয়েই। বালি থেকে যায়। এমনকি আমি দুইদিন মুরগির মাংস কিনে দেখি যে ভিতরে কাচা ছিলো। খেতে না পেরে ফেলে দিয়েছি৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৭ ব্যাচের এক ছাত্রী বলেন, হলের ওয়াশরুম গুলো প্রতিদিন পরিস্কার করা হয় না। মাঝে মাঝে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিন ৪ -৫ দিন পর পর পরিষ্কার করা হয়। এতে করে ওয়াশরুমে অনেক দুর্গন্ধ ছড়ায়। একবারতো প্যাডের বিনে পোকাও ধরে গিয়েছিলো।
ইতিহাস বিভাগের ৪৯ ব্যাচের ফারজানা বলেন, রুম রাস্তার কাছাকাছি হওয়ায় এই গরমের দিনেও শব্দের জন্য দরজা জানালা খোলা রাখা যায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৮ নং হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, আমরা লোক সংকটের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। লিফটের ত্রুটি সম্পর্কে প্রকৌশল অফিসকে জানানো হয়েছে। তারা কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি অচিরেই আমরা এসব সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
এছাড়াও ক্যান্টিন সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন ক্যান্টিনটি এখনো স্থায়ী করা হয় নি। তারা যদি ভালো কাজ করতে পারে, শিক্ষার্থীরা যদি ভালো বলে তবেই তাদেরকে স্থায়ী করা হবে।