|| ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
স্ত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় স্বামী সহ শশুর-শাশুড়ী গ্রেপ্তার
প্রকাশের তারিখঃ ৮ মার্চ, ২০২৩
সাভারের শাহীবাগ এলাকায় গৃহবধু সুমাইয়া আক্তারকে (১৮) শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় স্বামী সহ শশুর-শাশুড়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) মোঃ হাসান শিকদার।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার বহেরাতলা গ্রামের খবির উদ্দিন মাদবরের ছেলে মোঃ সাকিব (২০), তার পিতা মৃত কালা মাদবরের ছেলে মোঃ খবির উদ্দিন মাদবর (৭০) ও মাতা মোসাঃ রুনা বেগম (৪৫)। তারা সবাই সাভার পৌর এলাকার শাহীবাগ মহল্লার আব্দুল জলিলের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
থানা পুলিশ জানায়, গত এক বছর পূর্বে সাকিবের সাথে নিহত সুমাইয়ার ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্কের সুত্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিছুদিন ধরে মা ও বাবার পরামর্শে গৃহবধু সুমাইয়াকে যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে স্বামী সাকিব। এরই মধ্যে স্ত্রীর ভরন-পোষনও বন্ধ করে দেয় তারা। একপর্যায়ে স্বামী ও শশুর-শাশুরীর অত্যাচার সইতে না পেরে সোমবার দুপুরে আব্দুল জলিলের দোতলা ভাড়া বাড়ির নীচতলার একটি কক্ষের পুর্বপাশে জানালার সাথে গলায় উড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে গৃহবধু সুমাইয়া। এঘটনায় শশুর বাড়ির লোকজন সুমাইয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে সাভার কেয়ার হাসাপাতালে ও পরে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় হাসপাতালটির দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা সুমাইয়াকে মৃত ঘোষনা করেন।
খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ নিহতের মরদেহটির প্রাথমিক সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করেন। পরে সন্ধ্যা ৬ টায় মেয়ের বাবা ইসমাইলকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তারা বিষয়টিকে অস্বাভাবিক বলে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীতে মঙ্গলবার মেয়ের বাবা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে স্বামী ও শশুর-শাশুরীর নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
নিহতের চাচা মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, সুমাইয়ার মা বিদেশে থাকেন। এই সুযোগে সুমাইয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে এক বছর পুর্বে তাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করে সাকিব। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আমরা বিয়েটি মেনে নিয়ে তার স্বামীকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রদান করেছি।
ইদানিং সাকিব ব্যবসার কথা বলে আরও ৭০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলো। কিন্তু সুমাইয়া বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় স্বামী সাকিব তাকে বেধরক মারাপিট করে। এঘটনায় সাকিবের বাবা-মা কোন প্রতিকার না করে উল্টো সুমাইয়াকেই বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এছাড়া সুমাইয়ার বুকে-পিঠে ও পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন থাকায় আমাদের সন্দেহ হচ্ছে তাকে মেরে ঝুলিয়ে রেখে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
তবে গ্রেপ্তারকৃত সাকিব জানায়, আমি সাভার নিউমার্কেটে একটি দোকানে কাজ করি। সোমবার সকালে প্রতিদিনের ন্যায় দোকানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করি। সুমাইয়া ও আমি খাবার সময় তার থালার মাংসগুলো আমি খেয়ে ফেলি। যার কারনে সে আমার উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে কান্না শুরু করে। আমি এতে মন খারাপ করে তাকে লাথি মেরে দোকানে চলে যাই। পরে দুপুরের দিকে পরিবারের লোকজন জানায় সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছে। আমি দ্রুত বাসায় গিয়ে সুমাইয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
সুমাইয়ার মৃত্যুটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা সে বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) মোঃ হাসান শিকদার বলেন, নিহতের মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী ও শশুর-শাশুরীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই বুঝা যাবে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.