চট্টগ্রামের আলোচিত বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার নয় মাস হতে চলেছে। প্রায় চার দিন স্থায়ী হওয়া ওই অগ্নিকাণ্ডে নিভে যায় ৫১ জনের প্রাণ। ওই ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের হওয়া মামলার প্রতিবেদন এখনো জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে ডিপোর পাশে আবারও দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটল।
শনিবার (৪ মার্চ) সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট নামে একটি কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছয় জন নিহতের পাশাপাশি ৩৩ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখনো মামলা করেনি পুলিশ। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মামলাটি বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা শাখা তদন্ত করছে। কবে নাগাদ মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন তদন্ত কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলা ডিবির পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী রোববার (৫ মার্চ) বলেন, এখনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ছয় জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে। কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রতিনিধিকে।
গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় অবস্থিত বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এরপর টানা ৮৬ ঘণ্টা আগুন জ্বলতে থাকে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ওই দুর্ঘটনায় আশপাশে থাকা ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও শ্রমিকসহ ৫১ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হন প্রায় দুই শতাধিক। পাশাপাশি ১৫৬টি আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় ডিপোর কার্যক্রম। এরপর আলাদাভাবে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করে প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে সীতাকুণ্ড থানায় ডিপোর আট কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলাটি করেন সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী। ওই মামলায় ডিপোর জিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) নাজমুল আকতার খান, ডিজিএম (অপারেশন) নুরুল আকতার, ম্যানেজার (অ্যাডমিন) খালেদুর রহমান, সহকারী অ্যাডমিন অফিসার আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) আবদুল আজিজ, কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশনের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়।