|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বিদেশী সিনেমার আমদানি বিষয়ে ডিপজলের ক্ষোভ প্রকাশ
প্রকাশের তারিখঃ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
দেশে হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রস্তাব পেশ করেছে। শর্ত সাপেক্ষে পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছর বিদেশী (উপমহাদেশীয় ভাষার) সিনেমা আমদানির কথা তারা বলেছেন। এর মূল সারমর্ম হচ্ছে, হিন্দি সিনেমা আমদানি। তবে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ এ প্রস্তাব দিলেও তার সাথে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও নির্মাতাদের অনেকে একমত নন। বিশেষ করে যারা চলচ্চিত্রের এ মন্দাবস্থায়ও সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তি দিচ্ছেন, তারা এ নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে চলচ্চিত্রের মুভিলর্ডখ্যাত ডিপজল ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা যারা চলচ্চিত্রকে গতিশীল করতে একের পর এক সিনেমা নির্মাণ করছি, হিন্দি সিনেমা আমদানি ও মুক্তি দিলে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। ইতোমধ্যে আমার পরপর পাঁচটি সিনেমা মুক্তির তারিখ নির্ধারিত হয়ে আছে। আগামী রোজার ঈদে মুক্তি দেব ওলিজা মনোয়ার পরিচালিত ‘বাংলার হারকিউলিস’, কোরবানির ঈদে আমার পরিচালনায় ‘জিম্মি’, রোজার ঈদের এক মাস পর মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘যেমন জামাই তেমন বউ’ এবং তার এক সপ্তাহ পর ‘ঘর ভাঙা সংসার’, কোরবানি ঈদের পর মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘অমানুষ হলো মানুষ’।
ডিপজল বলেন, সিনেমাগুলো ধারাবাহিকভাবে মুক্তি পেলে আমাদের চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরে যাবে। কারণ, প্রত্যেকটি সিনেমা আমি দর্শকের চাহিদা ও সময়োপযোগী করে নির্মাণ করেছি। চলচ্চিত্রের এই দুঃসময়ে আমি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সিনেমাগুলো নির্মাণ করেছি শুধুমাত্র চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইয়ে দেয়ার জন্য। আমি নিশ্চিত, সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে আমাদের চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ডিপজল বলেন, শুধু আমি নই, ঈদে আরও কয়েকজনের সিনেমা মুক্তি পাবে। অনেকে সিনেমা নির্মাণ করছেন। সেগুলো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেয়া হয়, তাহলে এসব সিনেমার নির্মাতারা অত্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়বে। তারা সিনেমা নির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আমরা যখন উদ্যোগী হয়ে সিনেমা নির্মাণ করছি, সে সময়ে হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেলে আমাদের চলচ্চিত্র যেটুকু রয়েছে, সেটুকুও ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিগত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি সিনেমা বেশ ভালো ব্যবসা করেছে। কোটি টাকার মতো ব্যবসা করেছে। এতে সিনেমার বাজার কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেকে সিনেমা নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমার সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে সিনেমার বাজার আরও চাঙা হয়ে উঠবে। কারণ, আমাদের দর্শক ফ্যামিলি নিয়ে আমাদের সংস্কৃতির সিনেমা দেখতে চায়। হিন্দি সিনেমার সংস্কৃতি আর আমাদের সিনেমার সংস্কৃতি এক নয়। তাদের সিনেমায় অনেক অশালীন গান ও দৃশ্য থাকে। এগুলো আমাদের সামাজিক সংস্কৃতির সাথে যায় না। আমরা আমাদের চেনাজানা পরিবার ও সমাজের সুসংস্কৃতি তুলে ধরি, যাতে দর্শক বিনোদনও পায়, আবার কিছু শেখার বিষয়ও পায়। চলচ্চিত্রের সম্মিলিত পরিষদ যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার সাথে দ্বিমত পোষণ করে ডিপজল প্রশ্ন করেন, এর সাথে যারা জড়িত তারা কয়জন সিনেমা নির্মাণ করছেন? খোঁজ নিয়ে দেখেন, একজনও এখন সিনেমা নির্মাণের সাথে নাই। তারা যদি আমাদের চলচ্চিত্রের এতই ভাল চান এবং এতই দরদ থাকে, তাহলে তারা কেন চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন না? কেন বিনিয়োগ করছেন না? আমি তো করেছি এবং একের পর এক সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তি দিচ্ছি। এ কাজ তো তারাও করতে পারেন। আমি মনে করি, তারা বিদেশি সিনেমা আমদানির নামে কিভাবে কমিশন পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে বেশি মনোযোগী। এ চিন্তা দিয়ে আমাদের সিনেমার উন্নয়ন করা যাবে না। উন্নয়ন করতে হলে আমাদের দেশের সিনেমার প্রতি দরদী হতে হবে। নিজেদেরকে উদ্যোগী হয়ে সিনেমা বানাতে হবে। অন্য দেশের সিনেমা দিয়ে নিজের দেশের সিনেমার উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিদেশী সিনেমার বাজার হলে, আমাদের সিনেমার অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা সিনেমাবিহীন দেশে পরিণত হবো।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.