|| ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
জমি সংক্রান্ত জামেলা মিট না হওয়ায় মায়ের দাফন বিলম্বসহ ভাই বোনের হানাহানি,বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
মোঃ আতাউর রহমান সরকার চাঁদপুর প্রতিনিধি
সাধারণত কারো মৃত্যুর পর মানুষের আবেগি হওয়ার কথা, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার কথা, কিন্তু মতলব উত্তরে আবুরকান্দি গ্রামে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র লক্ষ করা যায়। সেখানে জমি নিয়ে হয় হানাহানি, তাও মৃতব্যক্তির পুত্র কন্যাদের মাঝে। জানা যায়, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের আবুর কান্দি গ্রামের মরহুম শহিদ উল্লা অজির স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৭০)। তিনি গত ১৬ ফ্রেরুয়ারী রাতে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যৃকালে তিনি ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে রেখে যান। মরহুম সুফিয়া বেগমকে ১৭ ফ্রেরুয়ারী রোজ শুক্রবার জুম্মাবাদ জানাজা ও দাফনের কথা থাকলেও লাশ দাফনে বাঁধা প্রদান ও হামলা করা হয়। হামলায় একজন আহত হন।
সরজমিন পরিদর্শন ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সুফিয়া বেগম প্রায় ৩০ বছর পূর্বে তার মেয়ে নাসিমা বেগমকে ২৪ শতক জমি হেবা কাবলা অসিয়ত নামা করে দেন। এ হেবা না ভেঙেই সুফিয়া বেগমের ছেলে কবির হোসেন ও মেয়ে আসমা বেগম এবং ডলি বেগম তার মাকে ফুসলিয়ে ২৪ শতক জমি সাব রেজেস্ট্রি করে নেয়।
এই কথা ফাঁস হয়ে গেলে নাছিমা বেগমের স্বামী হান্নান মৃধা স্ত্রী ও ৪ টি মেয়ে রেখে প্রায় তিন বছর পূর্বে ঢাকায় চলে যায়। এখন নাছিমা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নাছিমার ৪ টি মেয়ে। তার সংসারে স্বামী ছাড়া অর্থ উপার্জন করার কোন লোকজন নাই। আর এ জমিটুকুই তার সম্বল, যেটা এখন তার বসতবাড়ি তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য কবির গংরা নাছিমাকে দেয় হুমকি ধমকি। এ কারনে প্রায় তিন বছর ধরে নাছিমার স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বাড়িতে কোন খরচও পাঠান না। পরিবারটি অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ ঝামেলা না কাটতেই হঠাৎ মারা গেল নাছিমার মা সুফিয়া বেগম। ১৭ ফ্রেরুয়ারী রোজ শুক্রবার জুম্মাবাদ জানাাজা দেওয়ার কথা থাকলেও মরহুমাকে সঠিক সময়ে জানাজা দেওয়া হয়নি। যেখানে মৃত ব্যাক্তিকে জানাজা দিবে, সেখানে হয়েছে হামলা, মারামারি, লাশ দাফনে বাঁধা।
বিশেষ করে প্রতারক, অর্থ লিপ্সু, নারী লো’ভী ভাই কবির তারই শশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজন যারা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির ইতিমধ্যেই মতলব উত্তরের সহ সারা দেশের আলোচিত ঘটনা জোড়কালির জমি সংক্রান্ত বিরোধের এই সেভেন মার্ডার এর আসামি হিসেবে সর্বাধিক কুখ্যাতদের উত্তর সুরীদে ভাড়াটিয়া লোকজন এনে উপরন্ত নিরীহ নাসিমা বেগমকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছিলেন মায়ের লাশ দাফন না করে। যা সমস্ত গ্রামবাসীদের কাছে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা বলে তারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এদিকে, কবির তার আরেক ভাই আলামিনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা ধার করেন কিন্তু অনেক বছর হলেও সেই ধার পরিশোধ করেননি। এমনকি আলামিন বিদেশ থাকা অবস্থায় যে বিল্ডিং করেছেন হিস্যা অনুযায়ী তার দুই রুমও বরাদ্দ পাননি বরং সেই বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ চরম একটা অরাজকতা বিরাজ করছে এই পরিবারটিতে। ইতিমধ্যেই তারা কোর্টে মামলা করেছেন, বিষয়টি সুরাহার জন্য, তারপরেও ভুক্তভোগীরা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।
অপরদিকে, ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মৃত সুফিয়া বেগম তার মেয়েকে ২৪ শতক জমি হেবা করে দেয় ৩০ বছর পূর্বে তৎকালীন ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যা প্রকৃতপক্ষে সাবকাওলা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু নাসিমা বেগমকে বিষয়টি বুঝতে দেওয়া হয়নি কারণ তিনি লেখাপড়া জানেন না। দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই একই জমি ৩০ বছর পর মৃ’তের ছেলে কবির হোসেন ও মেয়ে আসমা ও ডলিকে সাব কাওলা দলিল করে দেয় সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে।
এ কারণে তাদের পরিবারের মাঝে নেমে আসে হতাশার জঞ্জাল। সুফিয়া বেগম যে একটি ব্লাকমেইল করেছে, তার এক মেয়ে নাছিমাকে ৩০ বছর পূর্বে জমি হেবা করে দেয়, একই জমি ৩০ বছর পরে তার ছেলে কবির হোসেন, মেয়ে আসমা ও ডলিকে লিখে দেয়, এ কারনে কবির গংরা নাছিমাকে হুমকি ধমকি দেয় বাড়ি ছাড়ার জন্য, ইতি পূর্বে কিছু দরন্ত কাঠাল গাছ কেটে ফেলেছে বলে জানা যায়, এ ব্যাপারে নাছিমা বেগম আদালতের দারস্থ হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসি। এ ঝামেলার মধ্যে দিয়ে মারা যায় সুফিয়া বেগম, পৃর্বের ঝামেলা কেন মিমাংসা হলোনা। এ বিষয়ে নাছিমা বেগম জানাজায় আগত মুসল্লি, এলাকাবাসিকে বিষয়টি জানান এবং বলেন মাকে দাফনের পূর্বে আমার ঝামেলা মিটিয়ে দেন। কেন নাছিমা এ কথা বলছে, তাৎক্ষণিক কবির হোসেন তার ভাড়াটিয়া লোকজন এনে নাছিমাদের উপর চড়াও হন। কবির হোসেন গংদের হামলা ও আঘাতে সাথী নামে এক মহিলা আহত হয়, আহত ব্যাক্তিকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে এলাকাবাসির পক্ষে আলম অজি, মোকলেছুর রহমান জনি( নাছিমার মামাতো ভাই), মোঃ মহসিন মুক্তার, মানিক মেম্বার, মোঃ শফিক, হাসমত আলী, আলাউদ্দিন খান, মোঃ হুমায়ুন কবির, শামীম, নাছিমার জেঠাতো ভাই মোঃ সুমন ও ভাতিজা আরিফ সহ এলাকার অসংখ্য নারী পুরুষ নাছিমার জমি নাছিমা বেগমকে ফেরত দেওয়ার জন্য থানা প্রশাসন সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী ভাড়াটিয়া হামলাকারীসহ কবির হোসেনকে তাদের ঘরে তালাবদ্ধ করে তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে ফোন দেন।
তবে মতলব উত্তর থানা পুলিশের এসআই মোঃ খোকন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল এসে এলাকাবাসির সহযোগিতা নিয়ে ভুক্তভোগী সমস্যার সমাধানের জন্য উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করেন এবং মুচলেখা গ্রহণ করে তাদের তালা খুলে দেন ও মৃতের লাশ দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মাগরিবের পর লাশ দাফন হয় ও উভয় পক্ষের বিরোধ মিটানোর জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মানিক মিয়াজীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.