|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মেয়র পদে জয়ী-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২
মেয়র পদে জয়ের পর জাপার প্রার্থী মোস্তফা
বিফ্র করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে ভোটের ব্যবধান লক্ষাধিক হতে পারে।
এখন পর্যন্ত ১০ কেন্দ্র থেকে ৬ হাজার সাতশ ৮০ ভোট পেয়েছেন মোস্তফা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন পেয়েছেন এক হাজার ৩শ ৮ ভোট।
বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন এক লক্ষ ষাট হাজার ভোট, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ভোট। ভোটারদের ধারণা, এবারে ভোটের ব্যবধান লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
এবারে নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন অথবা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল। তাদের তিন জনের ভোট প্রায় কাছাকাছি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটার সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোটাররা বলছেন, সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তফা সিটির অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাছাড়া, রংপুরে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা এবং তাঁর ব্যক্তি ইমেজ এ জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে দলীয় নমিনেশন দেয়ায় খোদ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাঁর পক্ষে ততটা সক্রিয় ছিলেন না। দলে তিনি ততটা গ্রহনযোগ্য ছিলেন না।
তাছাড়া, তার ব্যক্তি ইমেজ ভোট পাওয়ার পক্ষে সহায়ক ছিল না। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমূখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এ যেন ভোট যুদ্ধ নয়; ভোট উৎসব। নগরীর ২২৯টি কেন্দ্রের কোথাও হট্টগোলের খবর পাওয়া
তাছাড়া, তার ব্যক্তি ইমেজ ভোট পাওয়ার পক্ষে সহায়ক ছিল না। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমূখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এ যেন ভোট যুদ্ধ নয়; ভোট উৎসব। নগরীর ২২৯টি কেন্দ্রের কোথাও হট্টগোলের খবর পাওয়া যায়নি। ঘন কুয়াশা, শীত আর হিম বাতাস উপেক্ষা করে সকাল থেকে নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রে ভোটারেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হতে থাকে।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড় ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। সকালে নগরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর নারী ও পুরুষ ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। ভোট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পাড়ার মতো। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারেই প্রথম সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের কারনে ভোটারদের মধ্যে ছিলো এক ধরনের অস্থিরতা। ভোট কেন্দ্রেগুলোতে ছিলো পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতার কারনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এবার মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন সর্বমোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে ৩০নং ওয়ার্ডে একজন সাধারণ কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা ভোটারদের ইভিএম সম্পর্কে ধারণা দিতে অনেকটা হিমশিম খান। অনেক ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ ইভিএমএর বাটনে ম্যাচ না করায় ভোট গ্রহনের অনেকটা সময় লেগে যায়। অনেক ভোট কেন্দ্রে ১ঘন্টায় মাত্র ২০ থেকে ৩০টি ভোট পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা।
নগরীর জাফরগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, অভিরাম দাখিল মাদ্রাসা, সরকারী বেগম রোকেয়া মহিলা কলেজ, কেরানীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আর্কেডিয়া ইন্টাঃস্কুল এন্ড কলেজ, মুন্সিপাড়া কেরামতিয়াস্কুল, মিস্ত্রীপড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক নির্বাচন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারদের দীর্ঘ লাইন।
জাফরগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা নারী ভোটা আফরিনা বেগম বলেন, সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু এখনো তার সিরিয়াল আসেনি। একই সেন্টারের পুরুষ বুথের দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জাদু মিয়া বলেন ক্ষেতের কাজ ফেলে ভোট দিতে এসেছেন। কিন্তু প্রায় ৪ ঘণ্টা হলো এখনো ভোট দিতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করেন ইভিএম এর কারনে তাদের এই দুগর্তি হয়েছে।
ভোটার আব্দুর জব্বার বলেন, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যদিও তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন কিন্তু কয়েকবার চেষ্টা করেও মেশিনে তার হাতের আঙ্গুলের ছাপ ম্যাচ করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে ভোট কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধ্য হন্য।
১ নং ওয়ার্ডের জাফরগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. রাছেল মিয়া ভোট গ্রহনে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, অনেকের একবারে আঙ্গুলের ছাপ ম্যাচ না হওয়ায় কয়েকবার চেষ্ট করতে হচ্ছে। আবার অনেকে ইভিএম মেশিনে প্রথম ভোট দিতে আসায় তাদেরকে বুঝাতে সময় লাগছে।
১৮ নং ওয়ার্ডের আর্কেডিয়া ইন্টা. স্কুল এন্ড কলেজ সেন্টারে ভোট দিতে আসা শরিফুল ইসলাম বলেন, এতাদিন শুনে এসেছি এভিএম মেশিনে দ্রæততার সাথে ভোট দেয়া যায় । কিন্ত বাস্তবে দেখছি একজনের ভোট দিতে অনেক সময় লাগছে। তাছাড়া অধিকাংশ ভোটার ইভিএমএ ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ না করার কারণেও সময় বেশি লাগছে।
এছাড়াও অনেক কেন্দ্রে দেখা গেছে, বুথে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকা, অস্পট ভোটার লিষ্টসহ নানা অব্যবস্থাপনার জন্য ভোটারদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে, ‘যত সময়ই লাগুক ভোট কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময় আগত ভোটারদের সকলের ভোট গ্রহণ করা করা হবে’ নির্বাচন কমিশনের এধরনের বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রার্থীরা।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা সকাল নয়টার দিকে নগরীর আলম নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এর পর তিনি প্রথম চেষ্টায় ইভিএমএ ভোট দিতে না পারায় দ্বিতীয় দফা চেষ্টার পর ভোট দেন। সকালে রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। তিনি ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
অপর দিকে রিটানিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
ঘন কুয়াশার সঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত। তবুও শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে সকাল থেকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) নির্বাচনে ভোট দিতে কেন্দ্রে ছুটে আসেন সব বয়সী ভোটাররা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হয় ভোটারদের লাইন। কেউ দল বেঁধে আবার কেউ সন্তান কোলে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে হাজির হন। রসিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পেরে খুশি তারা।
অনেকে আবার ভোট দিতে গিয়ে ইভিএমের ব্যবহার বুঝতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন। তারা বলেন, সুন্দর পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছি। প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিতে পেরে খুশি। তবে আঙ্গুলের ছাপ মেলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এসব সমাধানের চেষ্টা করলে আরও দ্রæত ভোট এগিয়ে যেত বলে মন্তব্য করেন তারা
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.