|| ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের উচ্চাঙ্গসংগীত সম্মেলন ও সুর সম্ভার গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
প্রকাশের তারিখঃ ২২ ডিসেম্বর, ২০২২
শুদ্ধ সংগীত চর্চায় মেধা-মননের বিকাশ ঘটে - ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ও যুগ্মসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, বাগীশ্বরী সংগীতালয় শুদ্ধ সংগীত এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের যে ধারাকে অব্যাহত রেখেছে আমার মনে হয় তাদের হাত দিয়ে অনেক বড় বড় শিল্পী উঠে এসেছে, আরো শিল্পী উঠে আসবে আমার বিশ্বাস। বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের সুন্দর শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশনে তাদের চোখে-মুখে একটা প্রত্যয়ের আলো দেখেছি। ছোট ৭/৮/১০ বছরের বাচ্চাটি যে সংগীত পরিবেশন করেছে তার হৃদয়ে, চোখে, মগজে ও মননে সংগীতের প্রতি ভালোবাসা ও আকুতি প্রকাশ পেয়েছে। সংগীত আমাদের মনকে শাণিত ও শান্ত করে। যখন আমি নার্ভাস বা সমস্যায় থাকি তখন আমি সংগীত শুনি। সংগীত হৃদয়কে আন্দোলিত করে। যদি শাস্ত্রীয় সংগীত হয় তাহলে কোনো কথাই নেই। শুদ্ধ সংগীত চর্চা মেধা-মননের বিকাশ ঘটায় এবং আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। শুদ্ধ সংগীত তথা সংস্কৃতি চর্চা মননশীলতা ও চারিত্রিক গুণাবলি বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি সুবিবেচক, আত্মবিশ্বাসী, মেধাবী, বুদ্ধিমান ও নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং সুস্থ সংস্কৃতির আলোয় মানুষকে আলোকিত করতে সাহায্য করে।
যুগ্মসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী গত ১৯ ডিসেম্বর সোমবার বিকাল ৫ টায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট (টিআইসি) মিলনায়তনে বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের ১৮ বছর পূর্তিতে সংগীতশিল্পী রিষু তালুকদারের উচ্চাঙ্গসংগীত বিষয়ক গ্রন্থ “সুর সম্ভার” এর মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মেলনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
১৭ ও ১৯ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মেলনের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ডিন স্কুল অফ ল ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন সংগীত গুরুমুখী বিদ্যা এ কথা সর্বজন স্বীকৃত। তবে সংগীতগুরু সবাই হতে পারে না। এর জন্য বিশেষ সংগীতগুণ থাকা বাঞ্চনীয়। প্রায় দুই হাজার বছর আগে শাস্ত্রীয় সংগীতের শুরু হলেও বাংলাদেশে এটি অত্যন্ত ধীরগতিতে এগিয়েছে। গুটিকয়েক সংগঠন আর অল্প কয়েকজন সংগীত গুরু ছাড়া এদেশে শাস্ত্রীয় সংগীত তেমন প্রসার লাভ করেনি। বাংলাদেশ উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারে বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। দীর্ঘদিন যাবৎ বাগীশ্বরী সংগীতালয় কর্তৃক আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব শুদ্ধ সংগীত প্রচার ও প্রসারে বেশ সুনামের সাথে অনন্য ভূমিকা রাখছে। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারত থেকে আগত বিশিষ্ট তবলা শিল্পী পণ্ডিত বিপ্লব ভট্টাচার্য্য। বাচিক শিল্পী সঞ্জয় পালের সঞ্চালনায় বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের সভাপতি লায়ন কৈলাশ বিহারী সেনের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কণ্ঠশিল্পী রিষু তালুকদার। বক্তব্য রাখেন বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মেলনের সমন্বয়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যীশু সেন, আহ্বায়ক প্রকৌ. রিমন সাহা, সদস্য সচিব প্রিয়তোষ নাথ, সদস্য পলাশ দে, শিক্ষক সমীরন সেন, ব্যাংকার উৎপল কুমার চক্রবর্ত্তী প্রমুখ।
শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করেন অর্জুন তালুকদার, রাগ বেহাগ খেয়াল, তবলায় পলাশ দে, তানপুরায় মীম ভট্টাচার্য্য। যুগলবন্দি পরিবেশন করেন স্নিগ্ধা দে ও অনিরুদ্ধ দাশ, রাগ মিশ্র খাম্বাজ ঠুমরী, তবলায় অমর্ত্য চক্রবর্ত্তী, তানপুরায় রাত্রি ধর। রাগ কলাবতী খেয়াল পরিবেশন করেন দোলন চক্রবর্ত্তী, তবলায় উৎপল দে মিঠু। ভারত হতে আগত একক তবলা বাদন পরিবেশন করেন তবলা শিল্পী পণ্ডিত বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, হারমোনিয়ামে রিষু তালুকদার। ঢাকা থেকে আগত খেয়াল পরিবেশন করেন শ্রাবন্তী ধর, তবলায় প্রশান্ত ভৌমিক, তানপুরায় মণিষা সরকার। খেয়াল পরিবেশন করেন উস্তাদ রিষু তালুকদার, তবলায় পণ্ডিত বিপ্লব ভট্টাচার্য্য (ভারত), হারমোনিয়ামে রক্তিম ধর, তানপুরায় সৌমি চক্রবর্ত্তী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন বিবেকানন্দ সংগীত নিকেতন, পরিচালনায় তন্বী বড়ুয়া ও সঞ্চিতা দস্তিদার। রিষু তালুকদারের শাস্ত্রীয় সংগীত বিষয়ক গ্রন্থ ‘সুর সম্ভার’ ও যীশু সেন সম্পাদিত ‘সুরপুষ্প’ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।
বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের অনুজ শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনায় ছিল- রাগ ভৈরবীর চতুরঙ্গ। ধ্রুপদ রাগের বাগেশ্রী পরিবেশন করেন অগ্রজ শিল্পীবৃন্দ। তবলায় পলাশ দে। রচনা ও সংগীত পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ রিষু তালুকদার। অনুষ্ঠানে অতিথিমণ্ডলী ও অতিথিশিল্পীবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.