|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা, গত এক মাসে রোহিতা ইউনিয়নে তিনটি ডাকাতি- দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৩০ নভেম্বর, ২০২২
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নে চুরি ও ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। এ নিয়ে গত এক মাসে রোহিতা ইউনিয়নে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তিন ঘটনায় মুখোশধারী ডাকাতরা বাড়ির লোকজনকে মারপিট করে বেধে সবকিছু লুট করেছে। ফলে এ এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে কোথাও কোথাও কমিটি গঠন করে চলছে পালাক্রমে রাত জেগে গ্রাম পাহারা। গত রোববার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের সরসকাঠি গ্রামে মোতালেব হোসেনের বাড়ির গ্রিলের তালা ভেঙে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা ৬-৭ জন ঘরে ঢোকে। বুকে পিস্তল ও গলায় চাকু ধরে জিম্মি করে ফেলে। পরে বেধে মারপিট করে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও স্বর্ণের কানের দুল নিয়ে যায়। গত (২৯ অক্টোবর) ভোরে ভান্ডারি মোড় সংলগ্ন আবুল কাশেমের বাড়ি হতে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও কাঁথা-কম্বল এবং গত শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) মধ্যরাতে কোদলাপাড়া মোড়ে মেঘনা বেকারির মালিক মশিয়ার রহমানের বাড়ি হতে ৪ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করেছে ডাকাতরা। ভুক্কভোগী পরিবারের সদস্য মোতালেব হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে নয়নকে নিয়ে আমি বাড়িতে থাকি। রোববার রাত ১টার দিকে গ্রিলের তালা ভেঙে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা ৬-৭ জন ঘরে ঢোকে। তারা আমার ছেলের বুকে পিস্তল ও গলায় চাকু ধরে আমাকে জিম্মি করে ফেলে। পরে আমাকে বেধে মারপিট করে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও স্বর্ণের কানের দুল নিয়ে যায়। মোক্তার মোল্যার ছেলে জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন রাত ১০ টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। এই সুযোগে রাতের কোন এক সময় অজ্ঞান পার্টি চক্রটি গেটের তালা ভেঙে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে চেতনা নাশক ‘স্প্রে’ করে তাদের সবাইকে অজ্ঞান করে নগদ টাকা ও সোনার অলংকার নিয়ে সটকে পড়ে। মশিয়ার রহমান বলেন, দুদিনের ব্যবসার ৪ লাখ টাকা নিয়ে ঘরে রেখেছিলাম। বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাড়ির প্রাচীর টপকে ১২-১৩ জন ডাকাত গ্রিলের তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। ডাকাতরা হাফপ্যান্ট ও মুখোশ পরিহিত ছিল। তাদের হাতে লোহার রড ছিল। বাড়ির মালিক বলেন, ডাকাতরা ঘরে ঢুকে আমাদের সবাইকে বেধে ৩টি ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। আমার হাত ও চোখ বেধে মারপিট করেছে। তারা ৪০ মিনিট তাণ্ডব চালিয়ে ৪ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে। যাওয়ার সময় সিসি ক্যামেরার মনিটর ভেঙে ক্যামেরা খুলে নিয়ে গেছে। রোহিতা ইউনিয়নের সরসকাটি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, গত শুক্রবার রাতে কোদলাপাড়া গ্রামে ডাকাতি হওয়ার পর রাতে পুলিশের জোরদার টহল ছিল। রোববার রাতে পুলিশের সাথে আমরা গ্রামবাসীরা রাস্তায় পাহারায় ছিলাম। এর মধ্যে রাত ১টার দিকে মাঠ দিয়ে ৬-৭ জনের মুখোশধারী ডাকাত দল গ্রামের মোতালেব হোসেনের বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ডাকাতি করেছে। রোহিতা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান বলেন, গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে শুক্রবার রাতে জলকর রোহিতায় ডাকাতরা অবস্থান করছে। এরপর থানা পুলিশ নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থানে ছিলাম। সবার সরব উপস্থিতির কারণে এ এলাকায় ডাকাতরা সুবিধা করতে পারেনি। পরে তারা কোদলাপাড়া ওয়ার্ডে এক বাড়িতে ডাকাতি করে পালিয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে গ্রামবাসী মিলে আমরা পাহারা দিচ্ছি। রোহিতা ইউনিয়নের কোদলাপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ওই বাড়িতে গিয়ে পুলিশে খবর দিয়েছি। রোহিতা ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন বলেন, পুলিশ ডিউটিরত অবস্থায় কিভাবে ডাকাতি হচ্ছে এটা ভাবার বিষয়। ডাকাতি ঠেকাতে প্রশাসন কোন কাজ করতে পারছে না। এসব চক্রের সদস্যরা কালো মুখোশ পরে চুরি ডাকাতি করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।ভুক্তভোগীরা চুরি ডাকাতি রোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.