|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
হাটাজারীতে প্রেমের টানে ইসলাম ত্যাগ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে কে বিয়ে-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১৭ নভেম্বর, ২০২২
প্রেমের টানে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছেন চট্টগ্রামের হাটাজারী উপজেলার এক মুসলিম মেয়ে।
মেয়েটির নাম সাজুনা আক্তার নিশু (২৬), পিতা মো. ইদ্রিস (বর্তমানে ওমান প্রবাসী)। তার বাড়ি উপজেলার হাটহাজারীর মেখল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মেখল গ্রামে।
মেয়েটি বান্ধবীর বাড়িতে ২ দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাজুনা আক্তার নিশু(২৬) হাটাজারীর পশ্চিম মেখল গ্রামের গোপাল নাথের ছেলে শয়ন নাথ (২১)-এর সাথে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক থাকায় হিন্দু মুসলিম মানেননি হিন্দু নাম রুদ্রানী দেবী,মেয়েটি রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনার বাঙ্গালহালিয়াতে চলে আসে।
বাঙ্গালহালিয়াতে স্থানীয় কতিপয় হিন্দু যুবকের সহযোগিতায় তারা বাঙ্গালহালিয়ার শিব মন্দিরে মেয়েটই মতামত নিয়ে এবং হিন্দু মতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ধর্ম পরিবর্তনের পর তার নতুন নাম রেখেছে রুদ্রানী দেবী।
গত ২৯ অক্টোবর রাতে তাদের বিয়ে পড়িয়েছেন মন্দিদের পুরোহিত কাজল চক্রবর্তী। এরপর থেকে তারা বাঙ্গালহালিয়া বাজারে ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন।
জানা যায়, মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে তার মা রোজি আক্তার বাদী হয়ে হাটাজারী থানায় গত ৮ নভেম্বর একটি নিখোঁজ ডাইরি করেন।
ডাইরি নম্বর ৫৩২। অপরদিকে মুসলিম মেয়ের ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও প্রচার হয়, এরপর থেকে তারা আত্মগোপনে চলে যায়।
ঘটনা জানতে পেরে হাটাজারী পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মা রোজি আক্তার বাঙ্গালহালিয়ার যেসব হিন্দু যুবক বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করে মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ওই যুবকদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই সুজানাকে ফেরত পেতে ১৪ নভেম্বর সারাদিন তার মা রোজি আক্তারকে বাঙ্গালহালিয়াতে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মেয়ের কোনো হদিস না পেয়ে আবার হাটাজারীতে ফেরত গেছেন তার মা রোজি আক্তার।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, সাজুনা আক্তার নিশুর এর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল।
তার আগের স্বামী হাটাজারী কলেজ গেইটের কামাল পাড়া এলাকার ইমনের ঘরে ৪ বছরের এক কন্যা সন্তান ও রয়েছে, তবে ইমনের সাথে তার দুই বছর আগেই ডিভোর্স হয়ে যায়।
এরপর থেকে সাজুনা মেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিল। স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়ে বাবার বাড়িতে আসার পর তার মা তাকে আবারো কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে টেকনিক্যাল কলেজে আইএ পড়ছিল মেয়েটি, জানা যায়, মেয়েটি সে নিজের ইচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেকে বিয়ে করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বাঙ্গালহালিয়া শিব মন্দিরের পুরোহিত কাজল চক্রবর্তী জ সাংবাদিকদের জানান, মেয়েটি এমন অবস্থায় বিয়ের আসরে বসে ছিল মনে হয় যে সে সত্যি একটি হিন্দু ফ্যামিলির মেয়ে।
বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন- অরুণ চৌধুরী, হারাধন কর্মকার (মন্দির কমিটির সভাপতি), সজল, সুমন আর সুজন এই পাঁচজন মিলে ছেলে এবং মেয়েকে বিয়ের জন্য নিয়ে এসেছিল।
তবে মেয়েটি যে মুসলিম সেটা জানায়নি। বিয়ের পর যখন জানতে পারি যে মেয়েটি মুসলিম, তখন তাদের কাছে জানতে চাইলাম, মেয়েটি যে মুসলিম, সেটি আমাকে না জানিয়ে কেন আমাকে দিয়ে এ বিয়ে পড়ানো হলো?
এর উত্তরে জানায় মেয়েটি ছেলেটিকে বিয়ে করতে চায় তাদের নিজের মতামতে, মেয়েটি তার নিজের ইচ্ছে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে, তবে মেয়েটি যদি তার মতামত বদলায় তার জন্য আমরা কি করতে পারি?/
অপরদিকে বাঙ্গালহালিয়া শিব মন্দির কমিটির উপদেষ্টা পুলক চৌধুরী বলেন, হারাধন কর্মকারসহ কয়েকজন আমাকে বিয়ের সময় ঘটনাটি জানিয়ে সেখানে যেতে বলে। আমি সেখানে গেলে বিয়ে পড়ানো হয় এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল।
আমি খাওয়া-দাওয়া করে চলে আসি। কিন্তু মেয়েটি যে মুসলিম, সেটা আমাকে কেউ জানায়নি। এটা আমি পরে জানতে পেরে মেয়েটিকে খুঁজে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়ার চেষ্টা করছি,যদি মেয়েটি তার নিজের ইচ্ছে চলে যেতে চায়।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য বাঙ্গালহালিয়া শিব মন্দির কমিটির সভাপতি হারাধন কর্মকার বলেন, এ বিবাহতে আমাদের কোন সম্পৃত্তা নেই।
মেয়ের মা রোজি আক্তার জানান, হারাধন কর্মকার, জগদীশ দেবনাথ, সুজন ঘোষ, জুয়েলসহ কতিপয় হিন্দু ছেলে আমার মেয়েকে বাঙ্গালহালিয়ার শিব মন্দিরে নিয়ে গিয়ে তাদের হিন্দু ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।
এবিষয়ে মন্দির কমিটি সাথে যোগাযোগ করা হলে মন্দের কমিটি জানান, মেয়েটি তার নিজের ইচ্ছায় এসেছে কেউ তাকে জোর করে নিয়ে আসেনি রোজিনা আক্তারের অভিযোগ মিথ্যে।
আমার মেয়ে ধর্ম ত্যাগ করে হলফনামা তৈরি করেছে বলে তারা আমাকে একটি মিথ্যা কাগজ দেখিয়েছে।
আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই, এদিকে এলাকার আশেপাশের লোকজন জানান মেয়েটি যে হেতু নিজের ইচ্ছে এসেছে এখানে কাউকে দোষারপ করা অন্যায়। এরকম বহু অহরহ ঘটনা ঘটছে,অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে গুলোকে ধর্মান্তরিত করা হয় ব্রেন ওয়াশ করে।
এ ব্যাপারে হাটাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন সবুজ জানান, তাদের লোকেশন জানার মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.