|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও’র প্রথম পালকীয় সফর ও খ্রীষ্টপ্রসাদ বিতরণ-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৬ নভেম্বর, ২০২২
গোপালগঞ্জ, ৬ নভেম্বর ২০২২-রবিবার; বরিশাল কাথলিক ধর্মপ্রদেশের নবঅভিষিক্ত বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও প্রথমবারের মত আজ গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বানিয়ারচর কাথলিক ধর্মপল্লীতে পালকীয় সফরে আসেন। উল্লেখ্য যে, ভ্যাটিকান রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশ্বব্যাপী কাথলিক চার্চের প্রধান ধর্মগুরু মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক মনোনীত হয়ে ১৯ আগষ্ট ২০২২ -এ তিনি বরিশাল শহরে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে হাজার হাজার খ্রীষ্টভক্তদের উপস্থিতিতে বিশপীয় পদে অভিষিক্ত হন এবং বরিশাল ধর্মপ্রদেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বরিশাল ধর্মপ্রদেশের একটি অন্যতম কাথলিক চার্চ হল বানিয়ারচর ধর্মপল্লী।
বিশপের আগমনে বানিয়ারচর কাথলিক ধর্মপল্লীর ভক্তদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ সকালে বানিয়ারচরে অবস্থিত পবিত্র পরিত্রাতার গীর্জায় এক বিশেষ খ্রীষ্টযাগ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে পৌরহিত্য করেন বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও এবং তাকে সহযোগিতা করেন বানিয়ারচর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার ডেভিড ঘরামী এবং সহযোগী পুরোহিত ফাদার রিচার্ড বাবু হালদার সহ অন্যান্য ফাদারগণ। এ অনুষ্ঠানে বিশপ অত্র ধর্মপল্লীর ২৬ জন ছেলেমেয়েকে প্রথমবারের মত খ্রীষ্টপ্রসাদ প্রদান করেন। কাথলিক চার্চের রীতি অনুযায়ী ছেলেমেয়েদের বয়স ৯-১০ বছর পূর্ণ হলে পবিত্র খ্রীষ্টপ্রসাদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয় এবং এর মাধ্যমে তারা আজীবনের জন্য এ প্রসাদ গ্রহনে যোগ্য হয়ে ওঠে। গত দুই মাস যাবৎ ধর্মপল্লীর ফাদার ও সিষ্টারগণ এই ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় রীতি অনুসারে প্রস্তুত করেন। ’খ্রীষ্টপ্রসাদ’ কাথলিক মণ্ডলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্রামেন্ট। কাথলিক ভক্তদের এই সাক্রামেন্ট গ্রহন করা একান্ত আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, আমাদের সন্তান লরেন্স ডি’ বিশ্বাস প্রথমবারের মত আজ বিশপের হাত থেকে খ্রীষ্টপ্রসাদ গ্রহন করে। লরেন্সের সার্বিক মঙ্গলার্থে সবার কাছে প্রার্থনার আবেদন রইল।
খ্রীষ্টযাগ শেষে চার্চের অডিটোরিয়ামে বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও’র সম্মানে এক সংবর্ধনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফাদার ডেভিড ঘরামী। অনুষ্ঠানে এলাকার ছেলেমেয়েরা নাচ-গান পরিবেশনসহ একটি নাটিকা উপস্থাপন করে উপস্থিত সবাইকে নির্মল আনন্দ উপহার দেয়। এ অনুষ্ঠানে বিশপের আগমনকে মহিমান্বিত করে রাখার জন্য একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয় যার মোড়ক উন্মোচন করে বিশপ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে কাথলিক মণ্ডলী (চার্চ) এ পর্যন্ত মোট আটটি ধর্মপ্রদেশ স্থাপন করেছে। প্রতিটি ধর্মপ্রদেশের জন্য একজন বিশপ নিযুক্ত হন যিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন সহ ধর্মপ্রদেশের কাথলিক ভক্তদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যা দিয়ে থাকেন। ২০১৬ সালে বরিশালে বাংলাদেশের ৮ম ধর্মপ্রদেশ স্থাপিত হয় এবং এখানে প্রথম বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার যিনি সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে চট্রগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশে আর্চবিশপ পদে নিযুক্ত হয়েছেন। রেভাঃ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও হলেন বরিশালে নিযুক্ত দ্বিতীয় বিশপ। বরিশাল ধর্মপ্রদেশের আওতাধীন ধর্মপল্লীগুলোতে তিনি এখন পর্যায়ক্রমে সফর করছেন।
1667740415589_1667740411993_বিশপ কাননের ১ম পালকীয় সফর
পৃথিবীতে খ্রীষ্টানদের মধ্যে দুটি বিশেষ অংশ রয়েছে; এর মধ্যে একটি হল- কাথলিক এবং অন্যটি হল- প্রোটেষ্ট্যান্ট। বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ১৩৫ কোটি কাথলিক ভক্ত রয়েছেন। বরিশাল কাথলিক ধর্মপ্রদেশের অধীনে গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বানিয়ারচর ধর্মপল্লীসহ মোট সাতটি ধর্মপল্লী রয়েছে যেখানে প্রায় বিশ হাজার কাথলিক ভক্ত রয়েছেন। প্রতিটি ধর্মপল্লীতে এক বা একাধীক ধর্মযাজক (পুরোহিত) থাকেন যাদেরকে ‘ফাদার‘ বলে সম্মোধন করা হয়। ধর্মপল্লীর যাজকগণ স্থানীয় খ্রীষ্টভক্তদের সরাসরি আধ্যাত্মিক পরিচর্যা দানসহ শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এজন্য প্রতিটি ধর্মপল্লীর আওতায় স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল সহ উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ধর্মীয় পরিচর্যার কাজে প্রতিটি ধর্মপল্লীতে যাজকদের পাশাপাশি ব্রতধারীগণও কাজ করেন যাদেরকে ‘সিষ্টার’ বলে সম্মোধন করা হয়।।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.