|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দেশের ৮টি জেলায় কিশোরীরা পাবে বাইসাইকেল-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৪ অক্টোবর, ২০২২
৮ জেলার কিশোরীরা পাবে বাইসাইকেল, প্রশিক্ষিত হবেন হাওরের নারীরা প্রতীকী ছবি
পিছিয়ে পড়া অবহেলিত কিশোরীদের মধ্যে ১৬ হাজার বাইসাইকেল বিতরণ করবে সরকার। প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া ছাত্রীরা পাবে এসব সাইকেল। এতে সুফল মিললে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। ৩২টি জেলা সদরের ৩৮৪টি স্কুলের ৫৭ হাজার ৬শ কিশোরীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে সরকার। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টিতে প্রস্তুত ও বিতরণ করা হবে স্যানেটারি টাওয়েল। আর হাওরের নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে নিতে আনা হচ্ছে প্রশিক্ষণের আওতায়। তিন প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
বাইসাইকেল পাবে কিশোরীরা
প্রাথমিকভাবে আট জেলায় (রাজবাড়ী, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ ও বরগুনা) বাইসাইকেল পাবে ১৬ হাজার কিশোরী। ‘কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৫ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন।
প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, স্কুলগামী ছাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, কিশোরী ক্ষমতায়ন, সহজ ও নির্ভয়ে পথচলা। প্রাথমিকভাবে বাইসাইকেল পাবে আটটি জেলার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীরা। নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রবেশের পথ সুগম করা, কিশোরীদের নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশে সহায়তা করবে এ প্রকল্প। নারীর অধিকার ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করাও অন্যতম উদ্দেশ্য। স্যানিটারি টাওয়েল প্রস্তুত ও বিতরণ
নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ন্যাপকিন ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ‘কিশোরী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টিতে স্যানেটারি টাওয়েল প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার।
তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের কিশোরী ও নারীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ করা হবে। এটা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা উন্নয়নে রাখবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি সময় থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটি।
প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য
নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের ৩২টি জেলা সদরের ৩৮৪টি স্কুলে এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। ৫৭ হাজার ৬শ কিশোরী স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টিতে প্রস্তুত ও বিতরণ করা হবে স্যানেটারি টাওয়েল।
হাওরের অবহেলিত নারীদের কর্মসংস্থান
হাওর এলাকার সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। এজন্য হাতে নেওয়া হবে ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকার সুবিধাবঞ্চিত নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প।
প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য
হাওর এলাকার সুবিধাবঞ্চিত নারী গোষ্ঠীর আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়ন। এজন্য ভাসমান বীজতলা তৈরি, অর্গানিক সবজি চাষ ও হাঁস প্রতিপালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নারীর অধিকার, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ-বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে নারী-পুরুষ বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টির মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন করা হবে।
সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার হাওর অধ্যুষিত এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এসব এলাকায় বছরে একটি ফসল উৎপাদিত হয়। আগাম বন্যা থেকে সেই ফসল মুক্ত করতে সহায়তা করবে এই প্রকল্প। ভাসমান বীজতলা তৈরি পদ্ধতি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, ভাসমান বেডের ওপর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ প্রশিক্ষণ ও হাঁস প্রতিপালন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর জানায়, তিনটি প্রকল্পে আলাদা আলাদাভাবে মোট ৭৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে। সবুজ সাথী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত কর্মসূচির একটি যোজনা, যেখানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সাইকেল বিতরণ করা হয়। এই প্রকল্প বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। পেয়েছে ইউনাইটেড নেশনের ইনফরমেশন সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড। এই আদলেই মূলত সাইকেল বিতরণের পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। সুফল মিললে পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) আয়শা সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, কিশোরী ও অবহেলিত নারীর উন্নয়নে কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। একটি উদ্যোগ কিশোরীদের সাইকেল বিতরণ। প্রাথমিকভাবে আট জেলায় এই কাজ শুরু হচ্ছে। সুফল মিললে পরে ৩২ জেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। এর পরে ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে। নারীর কর্মসংস্থানেরও উদ্যোগে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের নারীরা আর পিছিয়ে থাকবে না।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.