|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনায়:ফখরুল–দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৫ আগস্ট, ২০২২
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম’র্থন আদায়ে সরকার ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বৃহস্পতিবার দুপুরে রোহিঙ্গা সংকটের পাঁচ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একার সংকট নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট যে একটি বৈশ্বিক সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে যথাযথভাবে উদ্ধুব্ধ কিংবা কনভিন্স করতে পারেনি।’
‘বিশ্বের অন্যান্য মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দেয় বা তৎপর হয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। এটা নিঃস’ন্দেহে সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না।’ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার মূল চ্যালেঞ্জ তথা নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াটি একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার তাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সংকটকে এখন আর গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বিশ্ব।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে মিয়ানমা’রে সাম’রিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুটি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এই পটভূমিকায় বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি এখন আগের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।ভা’রত, চীন, জা’পান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক মহল আরও কার্যকরি ও ফলোপ্রসূ চাপ না দিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমা’রে পাঠানো সম্ভব নয়। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে আরও জো’রাল রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। মিয়ারমারের সামরিক জান্তার ওপর প্রচন্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’
২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের কক্সবাজারে প্রবেশ করে। এই সংখ্যা এখন ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারে ‘ব্যর্থতার’সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন,এই সংকটের শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমা’রের ওপর কোনো কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে সরকার পারেনি। একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও তারা (সরকার) রাখাইনে পাঠাতে পারেনি।’
‘শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিনের এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিঃস’ন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে আমরা মনে করি।’তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে শুধুমাত্র কাগুজে চুক্তিতে ব’ন্দি না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের পথে এগুতে হবে। এই সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা, বিশ্বপরাশক্তিগুলোর নিজ নিজ ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলব্ধি করাতে হবে।’
‘আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমা’রে ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায়, মিয়ানমা’রের নাগরিকত্ব নিয়ে, সম্মানজনক ও টেকসই। কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের পাতানো খেলার অ’পকৌশল হিসেবে নয়।’রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিদেশ সফরও করেননি বলে অ’ভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার কথা তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, আন্তর্জাতিকভাবে দুর্বল এবং স্বৈর সরকার হিসেবে পরিচিত একটি ম্যান্ডেট বিহীন সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো জটিল ও আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র একটি জনবান্ধব গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারাই এটা সম্ভব। যা বাংলাদেশে এই মুহূর্তে অনুপস্থিত।’
‘একটি অগণতান্ত্রিক ও গণবিচ্ছিন্ন সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও স্থবিরতার প্রধান কারণ। তাই এই মুহূর্তে সর্বাগ্রে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই সম্ভব হবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সামাজিকভাবে বড় ধরনের ভ’য়ের কারণ আছে। যেটা আপনারা বুঝতেই পারছেন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.