|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
চিলমারীতে ড্রামের ভেলায় পাড়াপাড় হচ্ছে মানুষ-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১৩ আগস্ট, ২০২২
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ডাটিয়ার চরে পানি প্রবাহের জন্য রাস্তা কাটায় ড্রামের ভেলায় করে পার হতে হচ্ছে মানুষের।
‘হামার ড্রামের ভেলাই একমাত্র ভরসা। কাউয়ো হামাক ব্রিজ করি দেয় না। ছাওয়াপাওয়াগুলে স্কুল যায় ঝুঁকি নিয়ে; কখন জানি পানিতে পড়ি কোন দুর্ঘটনা ঘটে।’ কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ডাটিয়ার চর এলাকায় আব্দুর রহিম ও খাদিজা বেগম।
জানা গেছে, চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ডাটিয়ার চর এলাকায় বন্যার পানি সহজে নেমে যাওয়ার রাস্তার কিছু অংশ কেটে দেন স্থানীয়রা। কিন্তু সেটাই এখন ২৫ বছর ধরে তিন গ্রামের মানুষের চলাচলে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের দুর্ভোগ দেখে এপ্রিল মাসে ড্রামের ভেলা করে দেন উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন কমিটির সদস্য জাহিদ আনোয়ার পলাশ। এর আগে বর্ষা মৌসুমে ছোট ডিঙি দিয়ে পারাপার হতো স্থানীয় ব্যক্তিরা। এই দীর্ঘ সময়ে চোখে পড়েনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। নির্বাচন এলেই শুধু আশ্বাস দেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এদিকে ওই এলাকা পরিদর্শন শেষে মাটি ভরাট করে সেতু নির্মাণ করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। তবে আদৌও বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
দক্ষিণ নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেরিনা, মৃদুল, মহিবুল ও জেমি বলে, ‘প্রতিদিন আমাদের এই ড্রামের ভেলায় করে পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। ভেলায় উঠতে ভয় হয়। এখন আমাদের রাস্তা করে দিলে ভালো হতো।’
দক্ষিণ নটারকান্দি এলাকার বাসিন্দা সোলাইমান বলেন, ‘২৫ বছর থেকে এখানে রাস্তা নাই। আমরা চলাচল করতে পারি না ঠিকভাবে। বৃষ্টির সময়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় চলাচল করতে। সামনে বাজার, কিন্তু ভারী জিনিস নিয়ে যাতায়াত করতে কষ্ট হয়।’
ডাটিয়ার চর এলাকার চান মিয়া বলেন, ‘নির্বাচন এলে সবাই রাস্তাঘাট ঠিক করে দিতে চান। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলে আমাদের আর খোঁজখবর নেন না কেউ। কিছুদিন আগে এক ভাই ড্রামের ভেলা করে দিছে। এখন একটু পারাপার হওয়া যায়। ইউএনও স্যার আসছিল— এখানে ব্রিজ করে দিতে চাইছে, কিন্তু সেই ব্রিজ কবে পাব জানি না বলে শঙ্কায় আছি।’
উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন কমিটির সদস্য জাহিদ আনোয়ার পলাশ জানান, ‘ওই এলাকার সমস্যা অনেক দিনের। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা কেন কাজটি করছেন না, সেটা বুঝে আসে না। পরে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পারাপারের জন্য আপাতত একটি ড্রামের ভেলা করে দিয়েছি। এখন মোটামুটি লোকজন পারাপার হচ্ছে। তবে ওখানে স্থায়ীভাবে ব্রিজ কিংবা রাস্তা হলে এই সমস্যা থাকবে না।’
অষ্টমীর চর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমি ডাটিয়ার চরের ওই রাস্তার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে একটি সেতু করে দিলে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত রাস্তাসহ সেতু করে দেওয়ার।’
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.