|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
কচুয়ায় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা রথযাত্রার প্রস্তুতি-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৯ জুন, ২০২২
এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব কচুয়া সাচার জগন্নাথ ধামের রথযাত্রা। পঞ্জিকা অনুযায়ী আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
সে অনুযায়ী পহেলা জুলাই প্রথম রথযাত্রা শুরু।এ বছরজগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজনে ১৫৪ তম জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রাচীন এ রথযাত্রা ঘিরে উৎসব এবং উম্মদনায় মেতে ওঠেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনরা।
কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে দীর্ঘ দুবছর পরে রথযাত্রা উৎসবে শামিল হবেন কচুয়ার তথা দেশ বিদেশের হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দ। সাচার জগন্নাথ ধামের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। ১০ দিন ধরে চলবে এ উৎসব। গত দুবছরে কোনও রকম আড়ম্বর ছাড়াই পালিত হয়েছিল রথযাত্রা। সেকারনে এবারে মহাসমারোহে লক্ষাধিক ভক্ত সমাবেশ হবে বলেও আশা বাদ ব্যক্ত করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
এ রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষ্যে সাচার জগন্নাথ ধাম মন্দির কমিটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করেছেন। আগামী পহেলা জুলাই শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় মঙ্গলআরতি, সকাল সাড়ে ৭টায় ও গুরু পূজা, সকাল ৮টায় চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ, সকাল ৯টায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, দুপুর ১২টায় ভোগা আরতি, দুপুর ২টায় ভজন কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ, বিকাল ৪টায় জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গন থেকে রথ টেনে পশ্চিম বাজারে আনা হবে। সন্ধ্যায় ৭টায় আরতি কীর্তন অনুষ্ঠিত হবে।
জগন্নাধ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি নিখিল দাস দৈনিক বাংলার অধিকার কে জানান, গত দুই বছর করোনা মহামারির কারনে আমরা কোন রকম নিয়ম রক্ষার্থে স্নান যাত্রা ও রথ যাত্রা উৎসব পালন করেছি। আশা করছি স্বমহিমায় ফিরে জাকজমকপূর্ণ ভাবে রথযাত্রা উৎসব পালন করবো। আমরা স্থানীয় এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও দেশ বিদেশের জগন্নাথ দেবের ভক্তবৃন্দের সহযোগীতায় জগন্নাথ দেবের পুনঃনির্মিত ভবন নতুন রূপে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমরা আশা করছি এবারের রথযাত্রায় লক্ষাধিক ভক্তদের সমাগম ঘটবে। তাই এই বিশাল ভীড়কে শৃঙ্খলার মাঝে রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশিপাশি আমাদের মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শতাধিক ভলেন্টিয়ার থাকবে। এছাড়া আগত ভক্তবৃন্দের জন্য পানি এবং প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
রথ উদযাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অরুন গোপ ও সুবল দাস জানান, জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেনের হাত ধরেই আমরা এই জগন্নাথ ধামের রথ যাত্রা উৎসব পালন করে আসছি। গত দুই বছর করোনার কারনে নিয়ম রক্ষায় রথ যাত্রা উৎসব পালনের পর এ বছর ফের পূর্ণ উদ্যমে হতে চলছে সাচার জগন্নাথ ধামের সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজন ১৫৪ বছরের প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব। আর এই উৎসবটিকে ঘিরে চলছে শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি। উৎসবে লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দদের সমাগমে জগন্নাথ ধাম মন্দির প্রাঙ্গনে উৎসবের আমেজ বিরাজ করবে। আগামী ১লা জুলাই ১ম রথযাত্রা উৎসব ও ৮ই জুলাই উল্টো রথযাত্রা উৎসব। সেই লক্ষ্যে আমরা সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পুলিশের পাশাপাশি আমাদের মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে রথযাত্রার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কথিত আছে যে, প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে সাচার বাবু বাড়ির জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ সেন ভারতে হিন্দু তীর্থস্থান পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে গেলে, জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দকে দর্শন দেননি। বরং পুরীর দরজা-জানালাগুলো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। দর্শন লাভে ব্যর্থ হয়ে পরম ধার্মিক গঙ্গা গোবিন্দ সেন দর্শন লাভের আশায় পুরীর বাহিরে আমরন-অনশন শুরু করে দেয়। অনশনের কয়েকদিন অতিবাহিত হলে গঙ্গা গোবিন্দ সেন স্বপ্নাদৃষ্ট হন যে, এ স্থানে জগন্নাথ গঙ্গা গোবিন্দ সেনকে দর্শন না দিয়ে তার সাচারের বাড়ির সম্মুখের দীঘিতে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে দর্শন দিবেন। স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে গঙ্গা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ক’দিন পর উক্ত দীঘিতে স্নান করার সময় আকস্মিক ভাবে ভাসমান নিম কাঠ আকৃতিতে জগন্নাথ দর্শন লাভ করেন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.