|| ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে “পদ্মা সেতু-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৫ জুন, ২০২২
দীর্ঘ প্রতিরক্ষার পর আজ উদ্ভোদন হলো পদ্মা সেতু। আগামীকাল ভোর থেকে উন্মুক্ত ভাবে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে যাবে সপ্নের পদ্মা সেতু।
কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের। কৃষিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেই সঙ্গে ব্যাপক হারে বদলে যাবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ছয় কোটি মানুষের। এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সবাই। আজ শনিবার (২৫ জুন) সকালে দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলায় উৎসবের আমেজ মেতে উঠেছে সাধারণ মানুষ ।
এ জেলার মানুষ স্বপ্নে বিভোর। তারা মনে করছেন পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে এবং অল্প সময়ে কৃষিপণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে। ফলে কৃষকের পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে আনেকখানি।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প, গার্মেন্ট ও টেক্সটাইলসহ নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার ঘটলে শিল্প বিপ্লব ঘটবে।
কৃষি ভিত্তিক বৃহৎ অনলাইন প্লাটফর্ম "কৃষকের প্রাণ কৃষি জগৎ" গ্রুপের এডমিন মোঃ আতাউর রহমান সরকার বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে সবজি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে আমার কৃষক সহযোদ্ধারা। দক্ষিণের ২১ জেলার কৃষকদের পন্য সমূহ সারাদেশে সহজে বিপনণ বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বাড়বে,ফলে দামও ভালো পাবেন। ভালো দাম পেলে উৎপাদন ও বৃদ্ধি পাবে, কারণ উৎপাদনে আগ্রহী হবে। এতে করে কৃষি জাতপন্যের আমদানি হ্রাস পাবে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।এতে আগামী অর্থ বছরে কৃষিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৩% থেকে ১৬% উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই কৃষি ভিত্তিক বৃহৎ অনলাইন প্লাটফর্ম এর প্রতিষ্ঠাতা জসিমউদদীন সরকার বলেন ফেরিঘাটে যানজট এবং বৈরী আবহাওয়ায় যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না অনেক সবজিবাহী যানবাহন। পচনশীল পণ্য হওয়ায় তখন এসব সবজির মান ও দাম দুটিই কমে যায়। লোকসানে পড়তে হয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের দুয়ার উন্মুক্তের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। সৃষ্টি হবে নবদিগন্তের।
মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য বলছে, প্রতিদিন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৪৫ থেকে ১৬০ টন মাছ নেওয়া হয়। এসব মাছের বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। মাছ জরুরি খাদ্যপণ্য। নির্দিষ্ট সময় পর এটি নষ্ট হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে মাছের বিপণন ও বাজারজাতকরণ সহজ হবে। এতে জেলে, মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হবেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিদেশে মৎস্য পাঠানো সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হবে। তাতে মাছের অপচয় হ্রাস পাবে। তাছাড়াও সুনীল অর্থনীতি চাকা আরো হবে গতিশীল। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ বাড়বে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক আয় বাড়বে মৎস্য খাত থেকে।
মূলত, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হয়েছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ২১ জেলায় যোগাযোগের বড় দিগন্ত উন্মোচন হবে। সেতু চালু হলে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার চিংড়ি মাছ, যশোরের গুড় ও সবজি আর গদখালীর ফুল, বরিশালের ধান ও পানসহ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি পণ্য ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর পাশাপাশি বিদেশেও দ্রুত রফতানি সম্ভব হবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.