আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রমত্তা খরস্রোতা পদ্মা নদী। তার ওপর সেতু! পানি প্রবাহের বিবেচনায় বিশ্বে আমাজন নদীর পরই পদ্মা নদীর অবস্থান। এক দশক আগেও পদ্মায় সেতু তৈরি ছিল অকল্পণীয় চিন্তা। অবশেষে সেই স্বপ্নই সত্যি হতে চলেছে।
নিজ অর্থায়নে তৈরি হওয়া এই সেতু এখন বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতার মূর্ত প্রতীক। তবে শুধু বাংলাদেশরই নয়, এই সেতু তৈরির মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ডের পাতায়ও নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের আজকের প্রতিবেদনে সেসব রেকর্ড নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।
দানব আকৃতির পাইল
পদ্মা সেতু তৈরিতে তিন মিটার ব্যাসের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যের স্টিল পাইলের ব্যবহার করা হয়েছে। এসব পাইল সর্বোচ্চ ১২৫ দশমিক ৫ মিটার গভীরে বসানো হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো সেতু তৈরিতে এত গভীরে গিয়ে পাইল প্রবেশ করাতে হয়নি। যা পৃথিবীতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
সব থেকে বড় ক্রেন
সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত করা হয়েছে সেটি চীন থেকে আনা হয়েছে। যার জন্য প্রায় সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম কোনো সেতু তৈরিতে এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে।
লম্বা স্টিলের স্প্যান
এই সেতুতে সবচেয়ে লম্বা স্টিলের স্প্যান বসানো হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। প্রতিটি স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন।
কংক্রিট ও স্টিলের ব্যবহার
পদ্মা সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল উভয়ই ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়নি।
ভূমিকম্প সহনীয়
পদ্মা সেতু ভূমিকম্প সহনীয় করতে সর্বোচ্চ ক্ষমতার ডাবল কারভেচার ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
একক সর্ববৃহৎ দরপত্র
এই সেতুর সুরক্ষায় নদীশাসন করা হয়েছে ১৪ কিলোমিটার। ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এই কাজ করেছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বে শুধু নদীশাসনের জন্য এককভাবে এত টাকার দরপত্র আর আহ্বান করার নজির নেই।
চাইলে যা সম্ভব
দেশের শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পদ্মা সেতু নিয়ে কিছুর মজার তথ্য। জানা যায়, স্বপ্নের এই সেতুটি তৈরির জন্য ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি'র তথ্য অনুযায়ী, ক্রিকেটে একটি আদর্শ মাঠের আয়তন হয় গড়ে ১ দশমিক ২৫ হেক্টর। অর্থাৎ, পদ্মা সেতু প্রজেক্টে অধিগ্রহণ করা মোট জমি দিয়ে চাইলেই ক্রিকেটের ২ হাজার ১৫৫টি বানানো সম্ভব।
সেই প্রতিবেদনের আরেকটি তথ্যে জানানো হয়, পদ্মা সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট বা বাতি বসানোর খুঁটি দেয়া হয়েছে। আর সেই খুঁটিগুলো এতোটাই মজবুত যে ২০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হলেও সেগুলো অক্ষত অবস্থায় থাকবে। অন্যদিকে, ল্যাম্পপোস্টগুলোতে ১৭৫ ওয়াটের এলইডি বাতি বসানো হয়েছে। যা দিয়ে একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির ম্যাচ চালানো সম্ভব।