|| ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
কচুয়া এক গৃহবধূর মৃত্যু,এটা হত্যা না মৃত্যু সন্দেহ -দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৭ মে, ২০২২
চাঁদপুরের কচুয়ায় রহস্যজনক আগুনে ঝলসে যাওয়া গৃহবধূ ১২দিন পর মারা গেছেন।
ঘটনাটি উপজেলার ১১নং গোহাট ইউনিয়নের খাজুরিয়া লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাইজের বাড়িতে ১২মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড় ১২টায় ঘটে।
জানা যায়, ওই বাড়ির মোঃ জামাল হোসেনের পুত্র শাহাদাত হোসেন'র (৪৫) সাথে একই ইউনিয়নের আমুজান গ্রামের দর্জি বাড়ির অলিউল্লাহর কন্যা নাছিমা'র (৩৫) সাথে শরা-শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। কর্মসূত্রে শাহাদাত কাতার প্রবাসী। ঘটনার দিন রাতে প্রবাসী শাহাদাতের স্ত্রী নাছিমার গায়ে আগুন লাগে। এতে নাছিমার শরীর ঝলসে যায়। ২৫ মে বুধবার বেলা আড়াইটায় ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাছিমার মারা যায় এবং পরেরদিন তার মরদেহ পিতা পরিবারের কাছে এসে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। মরহুমার নামাজে জানাজা শেষে পিতা পরিবারের গোরস্থানে দাফন করা হয়।
আগুন লাগার কারন বা ঘটনা সম্পর্কে কেউ কোন তথ্য দিতে পারছেনা। বিষয়টি রহস্য ঘেরা বিধায় এলাকায় নানান গুঞ্জন শোনা যায়।
নাছিমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পিতা অলিউল্লাহর সংসারে ৭ মেয়ের পর ১ ছেলে জন্মগ্রহণ করে। ৭ মেয়েকে বিয়ে দিতে হিমশিম খাওয়া পিতা কন্যার মৃত্যু সংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। নাছিমার সুবাদের কন্যা পাখিকে দেবর আরিফের কাছে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। নাছিমার মৃত্যু নিয়ে ওই পরিবারেও চলছে নানান গুঞ্জন। অপরাপর ৬ বোন ও আত্মীয় স্বজন তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচার প্রার্থণা করেন তারা।
নাছিমার কনিষ্ঠ কন্যা রিমু জানায়, আমার মা ওইদিন রাতে আমাদের বসত ঘরের মেঝেতে আর আমি খাটে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মায়ের চিৎকারে আমি জেগে উঠে দেখি মায়ের গায়ে পরিধেয় জামায় আগুন। আমি তাৎক্ষণিক বাথরুমে পানির জন্য যাই আর এসে দেখি এরই মধ্যে মায়ের সারা শরীর ধোঁয়ায় আবৃত। তবুও গায়ে পানি ঢালি। কিন্তু কোন ফায়দা হয়নি। আমার ডাক চিৎকারে লোকজন আসে। তারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিক বাংলার অধিকার কে জানান, ডাক চিৎকার শুনে আমরা দৌঁড়ে যাই। তখন তাদের ঘরের দরজা বন্ধ ছিলো। রিমু দরজা খুলে দিলে আমরা ঢুকে দেখি সারা ঘরে ধোঁয়া আর ধোঁয়া আগুন নেই। শাহাদাতের স্ত্রী ওই ধোঁয়ার মাঝেখানে বসে আছে। বাঁ হাত আগুনে পোড়া। পরিধেয় কামিজের এক কোণা ও সেলোয়ারের পিছনের অংশে কিছুটা পোড়া রয়েছে। আমরা সিজার দিয়ে জামা কেটে নতুন জামা পড়ানোর সময় দেখি নাছিমার বুক, পিঠসহ সারা শরীরে আগুনের ফোস্কা পড়ে গেছে। শরীরে পরিধেয় বস্র অক্ষত থেকে সারা শরীর কি ভাবে ঝলসে যায়? আমরা তা বুঝতে পারছিনা। আগুন ছাড়া এভাবে ঝলসে যাওয়ার এমন ঘটনা আমরা প্রথম দেখেছি।
তারা আরও বলেন, এঘটনার পূর্বে নাছিমার কাছে কে বা কারা ২০ থেকে ২৫টি চিঠি দেয়। যাতে লিখা ছিলো "তুই এখান থেকে চলে যা, তুই এখানে থাকিস না, তোকে হত্যা করা হবে, তোর মেয়েদেরকেও হত্যা করা হবে"
কে এমন লিখা যুক্ত চিঠি দিতো তা আমরা জানিনা। বিষয়টি এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি রহস্যাবৃত রয়েছে বলে তারা জানান।
নাছিমার দেবর আরিফ বলেন, ভাবির সাথে কারও কোনদিন কোন শত্রুতা ছিলোনা। কি ভাবে, কে বা কারা এধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে একটি চক্র আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। যা আদৌ সঠিক নয়। স্থানিয় গণ-মাধ্যম কর্মিরা তার কাছে হাসপাতালের তথ্য চাইলে তিনি দিতে বাধ্য নন বলে জানান।
এলাকাবাসী বলেন, শাহাদাতের ছোট ভাই আরিফের সাথে নাছিমার পরকীয়া সম্পর্কের কথা নিয়ে এলাকায় রয়েছে যথেষ্ট গুঞ্জন। আরিফ প্রথমে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার দীঘলিয়া গোবিন্দপুরে বিয়ে করেন। ওই স্ত্রী আরিফের সাথে নাছিমার আপত্তিকর দৃশ্য দেখে বাবার বাড়ি চলে যায় এবং আরিফের সংসার না করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করে। বহু সালিশ দরবারের মাধ্যমেও ওই সংসার টিকানো সম্ভব হয়নি। তারপর আলোচনা সাপেক্ষে নাছিমা তার আপন ছোট বোন পাখিকে আরিফের কাছে বিয়ে দেয়। আরিফের দ্বিতীয় বিয়ের পরও নাছিমা-আরিফের পরকীয়া আগের মতই চলতে থাকে।
বিষয়টি নাছিমার ছোট মেয়ে রিমু জানতে পারলে মা ও মেয়ের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। সেদিন রাতে রহস্যজনক আগুন সম্পর্কে রিমু সব কিছুই জানে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা কান্ড। ঘটনায় দগ্ধ হওয়া নাছিমাকে দেবর আরিফ ও অন্যান্যরা প্রথমে কুমিল্লায় পরে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ডেম হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে চাইলে অর্থ লোভী কিছু মানুষের কারনে এমন মৃত্যুটি রহস্যাবৃত থেকে যায়। নাছিমার মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের জন্য আইন শৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তারা।
অভিযোগের আলোকে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার নাজিম উদ্দীন দৈনিক বাংলার অধিকার কে জানান, এবিষয়ে ভিকটিম পরিবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি মামলায় রুপান্তরিত হলে থানা পুলিশ ভিকটিম পরিবারকে আইনী সহযোগিতা দিবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.