সামু মিয়ার অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা ছিল কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার নুরপুর গ্রামের দিনমজুর সামু মিয়া যা আয় করতেন তা দিয়ে আধপেটা খেয়ে দিন কাটাতেন। তবে এসব এখন অতীত।উপজেলা কৃষি অফিস বাজিতপুর এর সহযোগিতায় ‘লতি রাজ’ কচু চাষ তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তাকে দেখে এবং তার পরামর্শ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন জায়গার প্রায় ৫০০ কৃষক কচুর আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সামু মিয়া কচু চাষ শুরু করেছিলেন। এখন তিনি উপজেলার সফল ‘লতি রাজ’ কচু চাষি। ২ বিঘা জমিতে কচুর চাষ করছেন তিনি। মাসিক আয় ৪০,০০০ টাকা ছাড়িয়েছে। উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০০- ৪০০ লোক সামুর কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে ‘লতি রাজ’ কচুর চাষ করছেন।
২০১৬ সালে নিজের দশ শতক কৃষি জমিতে ‘লতিরাজ’ কচুর আবাদ শুরু করেন। লতির জন্য আলাদা কচু আবাদের কোনো ধারণাই এ এলাকার কৃষকদের ছিল না। অনেকে ধানের জমিতে কচুর আবাদ দেখে হাসাহাসি করেন। প্রথম বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ১০ হাজার টাকা। পরেরবার স্থানীয় ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এক বিঘা জমি লিজ নিলেন। বাড়ালেন কচুর আবাদ। পরের বছর দিগুন লাভ করলেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সম্প্রতি নুরপুর গিয়ে দেখা যায়, সামু তার কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে কচু খেত থেকে লতি সংগ্রহের কাজ দেখাশোনা করছেন।
প্রতি কেজি লতি পাইকারি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তার উৎপাদিত লতি পাইকাররা চালান করেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। সামু খেতের আইলে বিভিন্ন সবজি লাগিয়ে ও আয় করেন। এ বছর ২ থেকে ৩ লাখ টাকার কচুর লতি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
বর্তমানে উপজেলার অনেক তরুণই সামুর দেখাদেখি ‘লতিরাজ’ কচুর চাষ করে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন। কচু চাষে সামুর কাছ থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নেন এলাকার চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এবি এম রকিবুল হাসান বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্দিকরন প্রকল্পের আওতায় বাজিতপুরে মুখীকচু, লতিরাজ কচু, ওল কচু, পানিকচু সম্প্রসারণ করতে আমরা কৃষকদের উপকরণ, প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি এবং এই সবজির বিপননেও আমরা কৃষকদের সার্বিকভাবে সহযোগীতা করে থাকি।
আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও জানান তিনি।