|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
কুড়িগ্রামে ৫ বছর ধরে উল্টে আছে সেতু,ড্রামের ভেলায় খাল পারাপার–দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২০ এপ্রিল, ২০২২
পাঁচ বছর ধরে উল্টে আছে সেতু।কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পূর্ব ধনীরাম গ্রামের হাজারো গ্রামবাসী অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বপ্ন জাগানো একটি সেতু পেয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই তা উল্টে গিয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে বিরতিহীনভাবে ভোগান্তি সহ্য করে ঝুঁকি নিয়ে ড্রামের ভেলায় খাল পারাপার হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীন উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ধনিরাম আবাসনগামী রাস্তার খালের ওপর ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এ কাজটির তদারকি করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটিএম দেলোয়ার হোসেন টিটু সেতুটি নির্মাণ করেন। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার মাত্র দুই তিন মাসের মধ্যে সেতুটি দেবে গিয়ে উল্টে যায়। পরে বন্যার পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মূলত নিম্নমানের সামগ্রী আর নির্মাণ ত্রুটির কারণে সেতুটি ভেঙে যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানায়, সেতুটি উল্টে যাওয়ার প্রায় পাঁচ বছর হলেও বিকল্প কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে জনভোগান্তির অবসান হয়নি।
পূর্ব ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দা মঈনুল বলেন, ‘মেলা দাবি দাওয়ার পর হামরা একটা ব্রিজ পাইছলং, মনে করছি কপাল বোধ হয় ঘুরিল (ভাগ্য প্রসন্ন হলো) ! কিন্তু ব্রিজ বানার (নির্মাণের) তিন মাস না যাইতে উল্টি পড়ছে। ব্রিজ নোয়ায়, হামার কপালে উল্টি গেইছে (ভাগ্য আবার আগের মতো খারাপ হয়েছে)। যে ভোগান্তি সেই ভোগান্তিতে আছে।’
পূর্ব ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ আলী জানান, ‘চরাঞ্চলের মানুষ এমনিতেই অবহেলিত। পূর্ব ধনীরাম আবাসনের ৯০ পরিবারসহ বাঘ খাওয়ার চরের কয়েক শত পরিবারকে বাজার করতে ওই খালের ওপর দিয়ে যেতে হয়। বছরের আট মাস খালটিতে পানি থাকায় ড্রামের ওপর চাটাই দিয়ে ভেলা বানিয়ে অসুস্থ রোগীসহ গ্রামবাসীরা চলাফেরা করেন। অনেক দাবি দাওয়ার পর একটি সেতু পেলেও কোনো সুবিধা গ্রামবাসী নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন,সেতু না থাকার কারণে এলাকার লোকজন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ সব জানার পরও কোনো সমাধান হয়নি। ব্রিজটি নির্মাণের পর ভেঙে গেলে দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক দফা তদন্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এখানকার মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ড্রামের ভেলায় খাল পারাপার হচ্ছেন। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে ওই স্থানে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত জানান,‘ওই সেতু নির্মাণে কোনো ত্রুটি ছিল না। সেতুর বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। ওই খালের ওপর যে দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণ করতে হবে তা আমাদের আওতায় পড়ে না। অন্য কোনো সংস্থাকে এটা করতে হবে। দুর্ভোগের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.