|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
মতলব উত্তরে গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ চাষে স্বপ্ন বুনছেন, প্রবাস ফেরত সোহেল সরকার-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৮ এপ্রিল, ২০২২
বর্তমান বাজারে সাধারণত দেখা মেলে সবুজ বা গাঢ়ো সবুজ বর্ণের তরমুজ। কিন্তু ব্যতিক্রমী সোনালি বর্ণের বিদেশি গোল্ডেন ক্রাউন, বা ‘মাল্টা তরমুজ’ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের টরকি হতিকাটা গ্রামের সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা সোহেল সরকার।
তিনি গ্রীষ্মকালীন শসা, করলা ও অন্যান্য সবজির পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণ জমিতে সেই বগুড়া থেকে ৪০০ চারা এনে পরীক্ষামূলকভাবে ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ তরমুজ চাষ শুরু করেন। নানান প্রতিকূলতা রোগও পোকার তীব্র আক্রমণ পেরিয়ে এখন কিছুটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলেছেন। এক দিকে যেমন সফলতা স্বপ্ন গুনছে , অন্যদিকে লাভবান হওয়ার অপেক্ষায় তিনি। সোহেল রানার এই নতুন জাতের তরমুজ চাষে সফলতা দেখে উপজেলার অনেকেই এই চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে এর চাহিদা খুবই বেশি।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোল্ডেন ক্রাউন বা মাল্টা তরমুজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সুস্বাদু ফল। সাধারণত উঁচু জমি এবং দোআঁশ মাটি এই তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। সাধারণত তরমুজ মাটিতে হলেও এটি মাচায় বড় হয়। বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল আসে এবং ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মাথায় ফল কাটা শুরু হয়। এ তরমুজের আদি নিবাস তাইওয়ান। নতুন জাতের তরমুজটি উপজেলায় এ বছর থেকে চাষ শুরু হলেও বাজারে ভাল দামের পাশাপাশি চাহিদাও রয়েছে বেশ।
তরমুজ চাষি সোহেল রানা জানান, আমি প্রবাসে ছিলাম দীর্ঘ দিন। দেশে এসে স্বাধীন পেশা হিসাবে কৃষি কাজ করার স্বপ্ন লালন করি। সে লক্ষ্যেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়ার জন্য উপজেলা যাই।তিনি আমাকে নতুন ফসল চাষের পরামর্শ দেন। আমি সে লক্ষ্য নিয়ে মালচিং পেপার এর মাধ্যমে ফসল চাষে উদ্ভুদ্ধ হই। আমি সেই বগুড়া থেকে চারা সংগ্রহ করেছি। জমিতে রোপণ করেছি। এক্ষেত্রে "কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ মতলব উত্তর উপজেলা,চাঁদপুর " এর সকল সদস্য আমাকে নানা ভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সকল সদস্যরা সবসময় বাজারে চাহিদা সম্পন্ন নতুন জাতের ফসল ও সবজি চাষ করেন । নতুন জাতের ফল ও সবজি চাষ করেন বলেই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বরাবরই সহযোগিতা পেয়ে থাকেন তারা।
মূলত ইউটিউব দেখে গোল্ডেন ক্রাউন বা মাল্টা তরমুজের বীজ নিয়ে আসেন তিনি। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে শীতকালীন ফসল শেষ হওয়ার পরে সেই জমিতে পরীক্ষামূলক ২০নশতক জমিতে বীজ বপন করে। বীজ বপনের পর গাছ ৬টি লম্বা হলে বাঁশের চটা দিয়ে মাচা দেয়া হয়। বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর ফুল আসে এবং দুই মাসের মধ্যে ফল কাটা শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে ভাল দামের পাশাপাশি চাহিদাও রয়েছে বেশ। সপ্তাহ খানেক পরই তরমুজ বাজারে উঠবে। বাজারে বর্তমানে এই তরমুজের প্রতিটির দাম ২০০ থেকে ৩শ’ টাকা পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। এই তরমুজ চাষে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে ২০হাজার টাকা লাভবান হবেন বলে আশাবাদী।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমন হোসেন বলেন, মাঠ পর্যায়ে সকল ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, বিষমুক্ত ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়েছে গোল্ডেন তরমুজ ক্ষেতে। এ ক্ষেত্রে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমন হয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, নতুন জাতের এই তরমুজ চাষে কৃষক সোহেল রানা’সহ অন্যদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে কৃষি বিভাগ। এই সোনালী রঙের গোল্ডেন ক্রাউন বা ‘মাল্টা তরমুজ’ চাষ ছড়িয়ে দিতে উপজেলায় বিভিন্ন চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.