|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
টিপ পরায় হেনস্তা করা পুলিশ কনস্টেবল শনাক্ত-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৭ এপ্রিল, ২০২২
টিপ পরায় হেনস্তা করা সেই পুলিশ কনস্টেবল শনাক্ত
কপালে টিপ পরা নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় এক শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সোমবার (৪ এপ্রিল) গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন,ওই কনস্টেবলের নাম নাজমুল তারেক। ঘটনার সাথে জড়িত হিসেবে তাকে চিহ্নিত করেছি আমরা। শিক্ষক যে জিডি করেছিলেন, তার যথাযথ তদন্ত হবে।’
গত শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তের শিকার হন তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। তিনি অভিযোগ করেন, ‘হেঁটে কলেজের দিকে যাওয়ার সময় হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন- ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন তাকে। ওই মধ্যবয়সী ব্যক্তির গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল।
ঘটনার প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান সেই ব্যক্তি।’ পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করছেন অনেকেই।
এই শিক্ষককে'বাজে গালি দেওয়ার’ পর তার গায়ে মোটরসাইকেলের চাকা তুলে হেনস্তার অভিযোগ ওঠা পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে সংসদেও।
গত রবিবার (৩ এপ্রিল) সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় সরকারি দলের সংরক্ষিত আসনের সুবর্ণা মুস্তাফা এ দাবি তোলেন।
সংসদে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন,দল-মত নির্বিশেষে বিশেষ করে নারী সমাজের জন্য অত্যন্ত ঘৃণিত একটি ঘটনা। ইভটিজিং আমরা শুনে এসেছি। বখাটে ছেলেরা স্কুলের বাচ্চাবাচ্চা মেয়েদের ইভ টিজ করে। সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু আমি যখন দেশের আইনরক্ষাকারী কাউকে ইভটিজিংয়ের ভূমিকায় দেখি, তখন সেটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সোমবার সকালে জানান, শনাক্ত করার পর নাজমুল তারেককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ওই শিক্ষক যে জিডি করেছেন, তারও যথাযথ তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
ফলো করুন-
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া জানান, কনস্টেবল নাজমুল তারেক পুলিশের প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত।
টিপ পরায় পুলিশের হেনস্তার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকার তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পুলিশের পোশাক পরা একজনের বিরুদ্ধে ‘ইভটিজিং’ এবং ‘প্রাণনাশের চেষ্টা’র অভিযোগ করা হয় ওই জিডিতে।
‘টিপ পরা আমার স্বাধীনতা’
ড. লতা সমাদ্দার হেনস্তার ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে, চলছে প্রতিবাদ। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। বহু নারী-পুরুষ ফেসবুকে টিপ পরা ছবি দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, 'টিপ পরা আমার স্বাধীনতা।'
শুধু ফেসবুক নয়, বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজন সভা-সমাবেশ ও বিবৃতি দিয়ে ড. লতা সমাদ্দারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন। রোববার সংসদে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি বলেন, নারীসমাজের জন্য এটি অত্যন্ত ঘৃণিত ঘটনা।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ বিবৃতি দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ' সমাবেশ করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিচারে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে।
দাবী উঠে সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করার, সে সুবাদে নাজমুলের বাসা থেকে ফার্মগেটের প্রজন্ত চেক করে পুলিশ সদস্যর বাইকের পেছনে কোন মহিলাকে পাওয়া যায়নি দাবী তদন্ত কর্মকতাদের।
রোববার রাতে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেন, এ বিষয়টি এত বড় হয়ে যাবে তা তিনি জানতেন না।
ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে কনস্টেবল নাজমুল বলেন, সেদিন বাসা থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যান।
তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ব্যাপক যানজটের কারণে সেদিন ফার্মগেটের পূর্বপাশ দিয়ে না গিয়ে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যান। মোটরসাইকেলে বসা তার স্ত্রীর পা ওই নারী শিক্ষিকার গায়ে লাগে। পরে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়।
নাজমুলের মুখে এসব ঘটনা শোনার পর তদন্তকারীদের বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরবর্তীতে তার স্ত্রীকে ডেকে আনা হয়। স্ত্রী একই কথা বলেন।
পরবর্তীতে দুজনের জবানবন্দি অনুযায়ী আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে অবগত করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নাজমুলের বাসা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেন। দেখেন মোটরসাইকেলের তার স্ত্রী ছিলেন না। এতে প্রতীয়মান হয় যে কনস্টেবল নাজমুল সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন।
এক পর্যায়ে সিসি ফুটেজসহ তথ্য-প্রমাণ হাজির করা হলে তখন নাজমুল তদন্তকারীদের কাছে ঘটনার সব কিছু স্বীকার করেন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.