|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দখল বাজদের দখলে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার মোড় ফুটপাত-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২৬ মার্চ, ২০২২
চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাত অধিকাংশ হকারদের দখলে চলে গেছে।রীতিমত ফুটপাতকেই মার্কেট বানিয়ে ফেলেছে তারা।অলংকার জুড়ে ফুটপাতে রয়েছে ছোট ছোট টং এর দোকান।যার মধ্যে রয়েছে চায়ের দোকান,ভাতের দোকান,কাপড় ও নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান।একে.খান ও অলংকার এলাকার রাস্তার দুই ধারে সারি সারি দাড়িয়ে আছে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি।ফুটপাতে আছে তাদের বাস কাউন্টার।
ফুটপাত ও রাস্তা দখলের কারনে নগরীর প্রতিটি মোড়ে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে।ফুটপাত দখলের কারনে মানুষের চলাচল হয় সড়কে যার ফলে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশু প্রতিবন্ধি ও নারীদের।
নগরীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,প্রতিটি এলাকার ফুটপাত এবং রাস্তা দখলদারদের দখলে।জি.ই.সি,দুই নম্বর গেইট,মুরাদপুর,বহদ্দারহাট,অক্সিজেন মোড় ঘুরে দেখা যায় ফুটপাতে রয়েছে চায়ের দোকান ভাতের দোকান,ফলের দোকান,মোবাইল ও ইলেক্ট্রনিক্স এর দোকান ও রাস্তা জুড়ে আছে বিভিন্ন রোডের ছোট বড় অনেক গাড়ির স্ট্যান্ড।
পথচারীদের কেনাকাটার সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে হকার উচ্ছেদ অভিযান চললেও দিন কয়েক পর তা আবারও আগের রূপে ফিরে আসে।চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের ফুটপাত হকারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শৃঙ্খলায় ফিরতে আগ্রহ নেই হকারদের।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, নগরে হকার রয়েছে প্রায় ২০ হাজার।এ সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে আছে ৩টি সংগঠন।এগুলো হলো-চট্টগ্রাম হকার্স লীগ,চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হকার সমিতি ও চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতি।এর বাইরেও রয়েছে আরও ৫ হাজার ভাসমান হকার।তারা বিভিন্ন গাড়িতে করে এবং অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে পণ্য বিক্রি করেন। আগ্রাবাদ ঘুরে দেখা গেছে,সকাল ১১টার পর থেকেই হকাররা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে। এতে বাধ্য হয়ে পথচারীরা নামছেন রাস্তায়।
রাজনৈতিকভাবে আশীর্বাদপুষ্টরাই এখন হকার মার্কেটে দোকানের মালিক।সমিতির নামে প্রতিদিন হকারদের কাছ থেকে নেওয়া হয় চাঁদা।অভিযোগ আছে,পুলিশ এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদেরও চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয় হকারদের।
চকবাজার,বহদ্দারহাট,জুবিলী রোড,রেয়াজউদ্দিন বাজার,নিউমার্কেট,আমতলা,স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা,খাতুনগঞ্জ,চাক্তাই,আসদগঞ্জ, ফিরিঙ্গিবাজার,লালদীঘি,জিইসি মোড়,মুরাদপুর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়ক, ষোলশহর,অক্সিজেন,পাহাড়তলী অলংকার মোড়,এ কে খান গেট,বড়পুল মোড়,ইপিজেডসহ নগরজুড়ে ফুটপাত দখল করে চলছে রমরমা ব্যবসা।
শুধু ফুটপাত দখল নয়,অনেক এলাকায় ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল রাস্তা পর্যন্ত রয়েছে দখলদারদের রাজত্ব। এই অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে।অথচ পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সব সময় বড় বড় বুলি আউড়ে যাচ্ছে তারা ফুটপাত মুক্ত করতে সদা সচেষ্ট ও তৎপর। তাদের তৎপরতা সারা বছর চলে।তবু যুগ যুগ ধরে ফুটপাত অবৈধ দখলে থেকে যায়।
ফুটপাত দখলের কারণে নগর অপরিচ্ছন্ন থাকে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে,যানজট হচ্ছে,পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন না।ফুটপাত দখল করে রাখায় মানুষ রাস্তায় হাঁটেন,এ কারণে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।যে শহরে ফুটপাত দেখা যায় না,সে শহরের সৌন্দর্যও থাকে না।এসব অসুবিধার কারণে নগরের মানুষ ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে।শুধু দখলদার এবং যাঁরা তাঁদের কাছ থেকে নানান সুযোগ-সুবিধা পান, তাঁরাই ফুটপাত দখলের পক্ষে।
অনেকে বলেন,ফুটপাত দখলের পেছনে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার পেছনে পুলিশেরও ভূমিকা আছে।এ অভিযোগের কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারেন না বলেই অনিয়মের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে নগরের ফুটপাত।এতে একটি বিষয় প্রমাণিত হয় এই অবৈধ,অনৈতিক ও অনিয়ম যাঁরা করছেন তাঁদের পেছনে নিশ্চয়ই ক্ষমতাধর কোনো শক্তির সমর্থন রয়েছে।না হলে বছরের পর বছর এভাবে চলতে পারে না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জানান,ফুটপাত পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়।এটা নাগরিক অধিকার।নগরের ব্যস্ত সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন এবং নাগরিকদের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতেই ফুটপাথে চলাচল জরুরি।
ফুটপাত পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়।এটা নাগরিক অধিকার।নগরের ব্যস্ত সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন এবং নাগরিকদের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতেই ফুটপাথে চলাচল জরুরি।এই ফুটপাত দখলমুক্ত না করতে পারলে পথচারীরা রাস্তা দিয়ে হাঁটবে যার ফলে দূর্ঘটনা লেগেই থাকবে বলে মনে করেন সুশীল সমাজের লোকজন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.