|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
মাতৃভাষা চর্চার মধ্যে দিয়ে বর্তমান সমাজের বিদ্যমান বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব –প্রফেসর অসিত বরন দাস-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
মাতৃভাষার চর্চর মধ্যে দিয়ে বর্তমান সমাজের বিদ্যমান বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরন দাস। তিনি ২১ফেব্রুয়ারী মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর সরকারি কলেজ আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়ে উপরন্তু কথাগুলো বলছিলেন, মেঘনাপাড়ের বাতিঘর বলে খ্যাত চাঁদপুর সরকারি কলেজে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১ ফেব্রুয়ারি ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হয়। রাত বারোটা এক মিনিটে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঁচজন শিক্ষক কর্মকর্তা চাঁদপুরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করার মধ্য দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিবসটির কর্মসূচির শুভ সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত রাখা হয়। সকাল সাড়ে নয়টায় কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবুল খায়ের সরকার, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ শিক্ষকবৃন্দকে নিয়ে শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে কলেজ শহিদ মিনার এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।সকাল ১০টায় কলেজ কনফারেন্স কক্ষে শুরু হয় ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও বঙ্গবন্ধুর অবদান: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনার। কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবুল খায়ের সরকারের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাছান।পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আল-আমিন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক গোপাল কৃষ্ণ ভৌমিক।সেমিনারের শুরুতে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আল-আমিন।বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সাইদুজ্জামান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ শামসুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান। উপস্থাপিত প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মোঃ ইমরান হাসান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক শওকত ইকবাল ফারুকী, মূখ্য আলোচক ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মোঃ মেহেদী আরিফ।প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর অসিত বরণ দাশ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউলসহ সকল ভাষা শহিদদের, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, গাজীউল হক, আহমদ রফিক প্রমুখদেরকে। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত আহত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে। তিনি বলেন, ‘‘৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি না হলে ৭১ সৃষ্টি হত না। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি একুশের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মাতৃভাষার চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের কারণ হলো সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমিয়ে আনা।’’ তিনি আরও বলেন, আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের মায়ের ভাষার উপর, মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর বারবার আঘাত এসেছে, এখনও আসছে। পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা বারবার আক্রমণ করেছে আমাদের ভাষা, স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর। অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। তিনি সেমিনার আয়োজনের সাথে যুক্ত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।সেমিনার শেষে কবিতা আবৃত্তি এবং রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বাদ যোহর কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং হোস্টেল মসজিদসমূহে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও তবারক বিতরণের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে তাৎপর্যপূর্ণ এই দিবসের অনুষ্ঠানমালার।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.