|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ভাইরাল জবি এবং জাবি গ্রাজুয়েট কৃষি উদ্যোক্তা দম্পতির পরিচয়-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বসন্তের প্রথম প্রহরে যখন বসন্ত বরন ও ভালোবাসার টানে দম্পত্তিরা কক্সবাজার সেন্টমার্টিন পাড়ি জমায় ঠিক সেই মুহুর্তে জীবনযুদ্ধের তাগিদে জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স পাস করা এক গ্রাজুয়েট নব কৃষি উদ্যোক্তা যায় ভালোবাসার কর্মস্থল মাঠে। আলুর জমি পরিচর্যা করতে। এবার ৮৭ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেন তিনি। এদিকে স্ত্রী বাড়িতে তার অপেক্ষায় ছিলেন সকাল সকাল একসাথে খাওয়া দাওয়া করার জন্য। কিন্তু স্বামীর জন্য অপেক্ষার পালা ভারী হয়ে গেল। সকাল গড়িয়ে যাচ্ছে। স্বামীকে ক্ষুদার্থ রেখে স্ত্রী একা খাননি। আর অপেক্ষার প্রহর না গুনে স্ত্রী ভাত নিয়ে চলে যান মাঠে।
এই বসন্তের সন্ধিক্ষণে সাফা শাক ও সিদোল ভর্তা যুগে ভাত নিয়ে দু'জনেই বসে পড়েন জমির আইলে।দুজনেই এক সাথে খাচ্ছেন, দুজন উচ্চশিক্ষিত হলেও তাদের মাঝে অহংকারের লেশ নেই। মন ভরে খেয়ে নেন। এ যেন এক মধুর ভালোবাসা। আহা কি প্রশান্তি উভয় মনে। তাদের মাঝে নেই কোন অহমিকা। এরুপ একটি দৃষ্টি ভঙ্গিই যে কোন সমাজকে বদলে দিতে পারে বা সমাজের সমালোচনাকে পেছনে ফেলতে পারে। একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে, পহেলা ফাগ্লুণের আগমনে ও ভালবাসা দিবসে দম্পত্তিরা বাহারি নকশার হলুদ পোশাক পরে যখন বিভিন্ন পার্কে ঘুরতে যান ঠিক সেই সময়েই প্রকৃতির ভেড়াজালে আটকিয়ে নিজের ও দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করতে হিজাব পড়ে স্বামীর খেদমতে মাঠে নামেন স্ত্রী। এটা এক অনন্য উদাহরণ। স্বামী-স্ত্রী গ্রাজুয়েট কৃষি উদ্যোক্তা দম্পতির এমনই একটি ছবি গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ভাইরাল। প্রশংসায় ভাসছেন গ্রাজুয়েট দম্পতি।
গ্রাজুয়েট নারী দৃষ্টি ভঙ্গির প্রশংসা করতে গিয়ে নারীর মমত্ব ও শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি উঠে এসেছে। স্বামী কৃষি উদ্যোক্তা হলেও দাম্পত্য জীবনে তারা বেশ সুখী। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপ ঘুরে জানা যায়, রবিবার(১৪ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় একটি ছবি তাদের ফেসবুকে পোস্ট করেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে একেএম বদরুদ্দোজা বিদ্যুৎ মুঠোফোনে দৈনিক বাংলার অধিকার কে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি গ্রামঃ বথপালিগাঁও
পৌরসভাও উপজেলাঃপীরগঞ্জ
জেলাঃঠাকুরগাঁও। বাবা ছিলেন একজন এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক, কিন্তু বিশ্বিবদ্যালয় পড়া অবস্থায় তিনি মা-রা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমিই বড়।’
তিনি আরও বলেন, ২০০৫/০৬ শিক্ষাবর্ষে জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম ব্যাচে দর্শন বিভাগের ভর্তি হন ২০১১ সালে অনার্স সম্পন্ন করেন। এর মাঝে বাবার মৃত্যু তার শিক্ষা জীবনের ছন্দপতন ঘটায়। ফলে তিন বছর পড়াশোনা বিমুখ থাকেন। অতঃপর আবারও পড়াশোনায় যোগদান করেন। জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে মোসতারিনা বিদ্যুৎ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে এক কন্যা সন্তানের জনক। এরই ফাকে সরকারি চাকরির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চেষ্টা করেন। শহরে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেন। কিন্তু একদিকে পরাধীনতা অন্যদিকে করোনার হানা, স্বল্প বেতনে তার পরিবারের সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই করোনার ভয়ভহতার সময় বাড়ি ফেরে স্বাধীন পেশা খুজতে থাকেন।
প্রথমেই আমের ব্যবসায় করে আশার মুখ দেখেন। অতপর খাঁটি মধু নিয়ে কাজ করেন। অবশেষে তিনি কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার সপ্ন লালন করেন। যেহেতু নিজের কৃষি জমি গুলো বন্দক ও লীজ লাগানো ছিল তা উদ্ধার করে তিনি এবং ৮৭ শতাংশ জমির মধ্যে আলু চাষ করেন। তার আলুর জমি অনেক ভালো আছে বলে জানান। আলু তুলে তিনি বোরোধান চাষ করবেন বলে জানান।
ফেইসবুকে পোষ্ট সম্পর্কে বদরুদ্দোজা বলেন, 'নিয়মিত অন্যান্য পোস্টের মতো ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছিলাম। তবে পোস্টটি এভাবে আলোচনায় আসবে বা ভাইরাল হবে আমি বুঝতে পারিনি। তবে বিষয়টি মানুষ পজিটিভলি নিয়েছে। আবার কেউ কেউ নেগেটিভ মন্তব্য করছে। তবে যে যাই বলুক কৃষি মাঠের এর বাহিরে ও ব্যক্তিগত জীবনে আমরা অনেক সুখী।'
স্ত্রী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীও খুব ভালো মানুষ। তার সততার কোনো কমতি নেই। আমার মতো একজন নগন্য মানুষকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলেই কতটা নির্লোভ ও নিরহংকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী বা পুরুষ নয়। এভাবে যদি প্রত্যেকে যার যার স্থান থেকে কাজের জন্য উৎসাহ দিতে এগিয়ে আসেন। তাহলে সমাজ বদলে যাবে। সামাজিক বেড়াজালে আটকে থাকা কুসংস্কার আর অহংকার নামক ব্যাধি পতন হবে। সামাজিকতা এবং সমাজের মান আরো বৃদ্ধি পাবে।’
মূলত ‘কোন একটি সম্পর্ক যখন পরিণতি পায়, তাহলে অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। আমাদের জীবন একটি, সব কিছু হিসাব-নিকেশ করে করা যায় না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র বিষয়গুলো পরিহার করতে হয়। শিক্ষিত মানুষ হয়ে যদি দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টাই, তাহলে কে পাল্টাবে? সবার আগে নিজের মনমানসিকতা বদল করতে হবে। তাহলে সমাজ বদলে যাবে।'
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাজুয়েট কৃষি উদ্যোক্তা দম্পতির ছবি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকের দৃষ্টিতে পড়েছে। ফেইসবুক ষ্ট্যাষ্টাসটি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা করেছেন।
গত দুদিন ধরে ফেইসবুকে তার এবং তার স্ত্রীর ছবিগুলো ঘুরছে। তবে ঘটনা যাই হউক সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টাতে এই দম্পতির মন মানসিকতা যে যথেষ্ট, এটাই তার জলন্ত উদাহরণ। তাই আমি বলবো দৃষ্টি ভঙ্গি বদলে ফেলুন সমাজ বদলাবে।’
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.