|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
মতলব উত্তরে ধনিয়াপাতার দাম কমে ৩০০/৪০০ শত টাকার বিপরীতে৩/ ৪ টাকা কেজি বিপাকে কৃষক-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে শীতের সবজি ধনিয়া পাতা ৩/৪ শত টাকা কেজির বিপরীতে ৩/৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে অন্যান্য নানা সবজি কিছুটা ঘাটতি। সবজির বাজার নিম্ম আয়ের মানুষের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। সবজির দামে বাজারে কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বাজারে নতুন পুরোন ও শীতের কোন সবজির কিন্তু তেমন নেই। ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নাগালের বাহিরে। স্বল্প আয়ের মানুষ পড়েছে মহা বিপাকে।
অন্যদিকে শীতের সবজি হিসেবে ধনেপাতার কদর একটু বেশি থাকার কথা। সবজিতে একটু ধনেপাতা দিলে সবজির স্বাদ ও গন্ধে ভিন্নতা আসে।যেকোন সবজি হয়ে উঠে মুখোরচক। কিন্তু এবারের ধনেপাতার যোগান দেখে ক্রেতা হতবাক। এই দিকে কৃষক ক্রেতার অবহেলা দেখে হতবাক।
এখন মাঘ মাস এই সময় এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি থাকে কিছুটা স্থবির। বোরো ধান রোপন নিয়ে বেস্ত থাকে সাধারন কৃষক।সব্জি চাষীদের চলে অফ সিজন। তাদের মাঠে তেমন সব্জি থাকেনা। কারণ এ সময় চর অঞ্চলে বেহিসাবি চাষাবাদের কারণে তারা বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেননা। ফলে এ মৌসুম সবজি চাষ বন্ধ রাখে বুদ্ধিমান কৃষকরা। সাধারণত বিকল্প কাজের সন্ধানে ছুটে যায় বোরোধান রোপণে, নিরানির কাজে। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে মেশিনে ধান রোপন ও আগাছানাশক ব্যবহারের কারণে এখন আর বোরো জমিতে তেমন শ্রমিক প্রয়োজন পড়ে না। তাই তাদের কাজের পরিধি কমেছে। এদিকে করোনার জন্য অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছে। গ্রামেও কাজের পরিধি অনেক কমেছে। মানুষের আয় রোজগারের সূচক নিম্মমূখি হয়ে পড়েছে।
ফলে অনেকেই ধনিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর বিশেষ করে এখন ভুট্টার সাথী ফসল হিসাবে সবাই ধনিয়া চাষ করছে। আর আগাছা নাশক স্প্রে করায় আগাছা মুক্ত থাকছে জমি। তাই উৎপাদন বাড়ছে। যার ফলে চাহিদার ৫০ গুণ যোগান হয়েছে।
এদিকে সারা বছর ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে সব্জি আমদানি করতে হয়। মতলব উত্তরের সকল কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের সব্জির সাথে তখন চওড়া মুল্যে ধনিয়াপাতা ও আমদানি করে প্রতিনিয়ত কিন্তু এখন রপ্তানি করার মতো কোন ব্যবসায়ী নাই।
আর উল্টোচিত্র নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের বাজারে। বিশেষ করে সবজির বাজারে দামে যেন, কিছুটা উত্তাপ লেগেছে। গত ২০/২৫ বছরের মধ্যে এ বছর হঠাৎ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের বাজারে আগুন লেগেছে। সব ধরণের সবজির সরবরাহ বাজারে ঘাটতিতে পড়েছে। যার কারণ হিসেবে কৃষক বলছে, এ গত বছর টমেটো, ফুলকপি,বাধাকপির উৎপাদন বেশি হওয়ায় দামে ধসের কারণে এ বছর কৃষকেরা এ ধরনের সবজি চাষাবাদ বন্ধ রেখেছে। ফলে এবার সব্জির দাম কিছুটা ঊর্ধ মুখী। আবার এবার পরপর ২-৩ বার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যার সৃষ্টি হওয়াকে দায়ী করেছে অনেকে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ও অতিভারী বর্ষণের ফলে অনেক সবজির খেত নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাজারে শীতের সবজি সরবরাহ কমেছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ অনেক কম। তাই সবজির বাজারে সকল ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সারেজমিনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষি উদ্যোক্তা জানান, আমি আজকে ৮০ কেজি ধনিয়াপাতা নিয়ে ১০০ টাকা গাড়ি ভাড়া করে স্থানীয় বাজার ছেংগারচর বাজারে যাই। আমার পাতার গাড়ি দেখে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা টিটকারী করছে। অনেক ব্যবসায়ীকে বললাম কিন্তু কেউই কিনতে রাজি হলো না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম খালে ফেলে দিবো। তখন দুজন ব্যবসায়ীর নিকট ২০০ আটি প্রায় ৮০ কেজির মত ১৭০ টাকা বিক্রি করি ১০ টাকা খাজনাও ১০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমার কাছে ৬০ টাকা থাকে তা দিয়ে নাস্তা করি হিসাব সমান সমান।
তার মতো অনেক কৃষক ই বিপাকে পড়েছে বাজারে গিয়ে। তাকে প্রশ্ন করা হলে কেন এতো কষ্ট করে বাজারে আনলেন তিনি বলেন মুলত আমার দায়বদ্ধতা থেকেই আমি খাদ্য বিনষ্ট করতে চাই না। তাই চেষ্টা করি ভোক্তাদের হাতে তুলে দিতে।কিন্তু এমন পরিস্থিতি হলে আমি আর দায়বদ্ধতা রক্ষা করতে পারবোনা। তিনি আরো বলেন সরকারের উচিত আমাদের উৎপাদিত এ ধনিয়াপাতা বিদেশে রপ্তানি করে আমাদের রক্ষা করা ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম করা।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.