|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
দুশ্চিন্তা বাড়ছে সিলেটে লন্ডনে ছড়াচ্ছে করোনা-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৯ জানুয়ারি, ২০২২
যুক্তরাজ্যে ফের বেড়ে চলছে করোনা।
প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ মানুষের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ‘অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স’ বলছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রতি ১৫ জনে একজন করোনা আক্রান্ত। করোনা আক্রান্ত বেড়ে চলছে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যেও। ফলে যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তা বেড়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে। যুক্তরাজ্যে থাকা আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উৎকণ্ঠিত দেশের স্বজনরা।
যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন সিলেটের প্রায় ৫ লাখ অধিবাসী। সিলেট বিভাগের প্রতিটি গ্রামেই রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। কোনো কোনো গ্রামের অধিকাংশ লোকজনই যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা। সিলেটের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেই চলে এখানকার স্থানীয় অর্থনীতি।
ফলে যুক্তরাজ্যের অবস্থা ভালো থাকলে ভালো থাকেন প্রবাসীদের সিলেটী স্বজনরা। ভালো থাকে সিলেটের অর্থনীতি। কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সিলেটের মানুষ। বিশেষ করে লন্ডনের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপের দিকে যাওয়ায় সেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ‘অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স’-এর তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে প্রতি ১৫ জনে একজন করোনা আক্রান্ত হলেও লন্ডনে প্রতি ১০ জনে একজন পজিটিভ ধরা পড়ছেন।
এমন খবরে প্রবাসে থাকা স্বজনদের নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সিলেটের মানুষ। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অনেকের পরিবারে করোনা হানা দিয়েছে বলে দেশে খবর আসছে। কেউ কেউ আবার দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। যে পরিবারে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে পুরো পরিবারকে আক্রান্ত করছে। এতে দুশ্চিন্তার মাত্রা বাড়ছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী মারা যান। সিলেটের অনেকেই হারান তাদের প্রিয়জন।
তাই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন উদ্বেগ তৈরি করেছে সিলেটবাসীর মাঝে। অনেকেই ফোন করে যুক্তরাজ্যে থাকা স্বজনদের আপাতত কাজে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। বাচ্চাদের স্কুলে যেতেও বারণ করছেন। কিন্তু প্রবাসীরা জানাচ্ছেন, যেহেতু এখনো সরকার লকডাউন ঘোষণা করেনি তাই ঝুঁকি নিয়েই তাদের কাজে যেতে হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। অনেকটা ভাগ্যের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েই তাদের চলতে হচ্ছে। এ জন্য তারা দেশে থাকা স্বজনদের কাছে দোয়া চাইছেন।
করোনা আক্রান্তদের সুস্থতা ও মহামারি থেকে প্রবাসে বসবাসরত স্বজনদের রক্ষায় সিলেটের প্রায় প্রতিটি মসজিদে শুক্রবার বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হচ্ছে। এদিকে, যারা পরিবার রেখে বেড়াতে এসেছিলেন, যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারা দ্রুত ফিরে যাচ্ছেন।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচাইয়ের বাসিন্দা নুরুল হক জানান, তার ভাই যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে বসবাস করেন। তার ভাই সপরিবারে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে দেশে তার পরিবার খুবই দুশ্চিন্তায় আছে।
লালাবাজারের ইকবাল হোসেন জানান, তারও ভাই সপরিবারে করোনা আক্রান্ত। এর আগেও একবার তার ভাই ও ভাবি আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তাদের দুই সন্তান সংক্রমিত হয়নি। কিন্তু এবার পুরো পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে তার ভাইয়ের অবস্থা ভালো নয়। সিলেট নগরীর কাজিটুলার ফয়সল আহমদ জানান, পরিবার রেখে তিনি তিন সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছিলেন।
যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে সফর সংক্ষিপ্ত করে এক সপ্তাহ আগেই তিনি ফিরে যাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও পার্লামেন্ট অধিবেশনে করোনার দ্রুত সংক্রমণের বিষয়টি জানিয়েছেন।
বরিস জনসন বলেন, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত এত দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ঘটেনি কখনো।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.