|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
কুড়িগ্রামে ফেলানী হত্যার ১১ বছর:ন্যায় বিচারের প্রতীক্ষায় পরিবার-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৮ জানুয়ারি, ২০২২
কিশোরী ফেলানি হত্যার ১১ বছর আজ। বিশ্বে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলেও পূর্ণতা পায়নি ন্যায় বিচারের। থেমে থেমে কচ্ছপ গতিতে চলচে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম। ওদিকে দীর্ঘ ১১ বছরে মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশ ফেলানীর পরিবার।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চৌধুরীহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর গুলিতে নিহত হয় কিশোরি ফেলানি। সে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী এলাকার নুরুল ইসলাম নুরু ও জাহানারা বেগমের মেয়ে। ফেলানির মরদেহ দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাটাতারে ঝুলে থাকার পর ২দিনব্যাপী পতাকা বৈঠকের মাধমে ৮ জানুয়ারি বিএসএফ বাংলাদেশি বিজিবির কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
৯ জানুয়ারি লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার গ্রামের বাড়ির পারিবাড়িক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ফেলানির এ খবর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার হলে সারা বিশ্বে তোলপার শুরু হয়। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় ফেলানি। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী, সংগঠন এবং বিজিবির পক্ষে থেকেও ফেলানি হত্যার বিচারের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহারের সোনারী বিএসএফ ছাউনিতে অমিয় ঘোষের বিচার কার্যক্রম শুরু করে দেশটির সরকার। আদালতে স্বাক্ষী দেন প্রত্যক্ষদর্শী বাবা নুরুল ইসলাম নুরু ও মামা আব্দুল হানিফ।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয় অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে। ৫ বিচারকের এই আদালত রায়ে বিএসএফ ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের হাবিলদার অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে ২০১৩ সালের ৬ আগস্ট অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। ফেলানি হত্যার সঠিক বিচার না পেয়ে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় হাই কমিশনারের মাধ্যমে পুনরায় বিচারের আবেদন করেন ফেলানির বাবা। পরে বিজিবি-বিএসএফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পুনঃ বিচারে বিএসএফ সম্মতি দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার শুরু হয়।
২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর ফেলানির বাবা নুরুল ইসলাম আদালতে অমিয় ঘোষকে আবারও অভিযুক্ত করে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন এবং অমিয় ঘোষের সর্বোচ শাস্তি দাবি করেন। কিন্তু এই বিচারে আদালত আবারও আগের রায় বহাল রাখেন।
পরে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) এবং ভারতীয় আইনজীবী অপর্ণা ভাট এর সহাতায় ফেলানি হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তার বাবা নুরুল ইসলাম। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ভারতের সুপ্রিমকোর্টে করা দুটি রিটের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীর পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হলফনামা দাখিলের জন্য ৩ সপ্তাহের সময় দেয় আদালত।
বিচারের এমন ধীরগতি আর ভারত সরকারের অবহেলায় হতাশ ফেলানীর পরিবার ও স্থানীয়রা। এখনও সঠিক বিচারের আশায় দিন গুনছেন তারা।
ফেলানীর ববা নুরুল ইসলাম বলেন, মেয়ে হত্যার ১১ বছর পেরিয়ে গেলো অথচ কোনো বিচার পেলাম না। আজ যদি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার সঠিকভাবে হতো উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হতো তাহলে সীমান্তে আর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতো না। আমি দ্রুত মেয়ের খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই দাবি করেন ফেলানীর মা জাহানারা বেগম এবং তার অন্যান্য ভাইবোনসহ স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা জজকোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাভোকেট আব্রাহাম লিঙ্কন বলেন, ফেলানী হত্যার রিটটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে শুনানীর জন্য কার্যতালিকার তিন নম্বর পর্যন্ত উঠেছিলো। পরে করোনার জন্য বিচার কাজ বিলম্ব হয়েছে। তবে ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে ভারত সরকারের উচিৎ দ্রুত বিচারের রায় দেয়া।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.