|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
এস এস সি তে উত্তীর্ণ দুই হাত প্রতিবন্ধি মোবারকের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বিসিএস
প্রকাশের তারিখঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১
প্রতিবন্ধিতার কারণে আমাদের সমাজে তাদের প্রতি কিছু বিরূপ মনোভাব থাকে এই মনোভাব, মন্তব্যগুলোকে জয় করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে বিভিন্ন সাফল্যের কথা শোনা যায়। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায়।
ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকার দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে মোবারক আলী(১৬)। জন্ম থেকে তার এই শারীরিক প্রতিবন্ধীতা। তার দুই হাতের আঙুল না থাকলেও রয়েছে কবজি।
হাত না থাকায় শুরুতে দ্বিতীয় শ্রেণি পযর্ন্ত মোবারক পা দিয়ে লেখালেখি করতো, পরে ধীরে ধীরে পায়ের পরিবর্তে দুই হাতের কবজি দিয়ে লেখালেখি শুরু করার চেষ্টা করে, একপর্যায়ে কবজি দিয়ে লিখে সফলও হয় মোবারক।
শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী মোবারক আলী এবার ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। হাতের কবজি দিয়ে লিখে সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এসএসসির ফলাফল ঘোষণা হলে সেও ফলাফল যথানিয়মে দেখে যে, সে জিপিএ-৩.৮৪ পেয়েছে, এই ফলাফলে অত্যন্ত আনন্দিত । প্রতিবন্ধী হলেও অদম্য মেধাবী মোবারকের এই সাফল্য তার বাবা-মা পরিবারের লোকজন সহ পুরো উপজেলাবাসীকে আনন্দিত করেছে।
উল্লেখ্য, মোবারক আলী এর পূর্বে ২০১৮ সালে কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হাতের কবজি দিয়ে লিখে জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও পরিবারের অভাব অনটন থাকার পরও কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। মোবারক আলীর চাওয়া, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, আমার এই সমস্যা আমাকে থামাতে পারেনি । তবে আমার বাবা একজন দিনমজুর। তার পক্ষে আমার পড়ালেখার খরচ বহন করা খুবই কষ্টের। তারপরও আমি লক্ষ্যে পৌঁছার চেষ্টা করে যাব । বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার স্বপ্নও দেখে মোবারক।
কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হকের মতে, মোবারক প্রতিবন্ধী হলেও যথেষ্ঠ মেধাবী। তার এসএসসির ফলাফলে দেখা যায়, উচ্চতর গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানে ‘এ প্লাস’ বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, রসায়ন, আইসিটি ও প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে ‘এ’, গণিত বিষয়ে ‘এ’ মাইনাস এবং দুটি বিষয়ে ‘বি’ ও একটি বিষয়ে ‘ডি’ পেয়েছে।
মোবারক আলীর মা মরিয়ম বেগম বলেন, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড়। নিজের কাজগুলো প্রায় সব নিজেই করতে পারে। কিছু কিছু কাজে সহযোগিতা করতে হয়। ওর ইচ্ছাশক্তি আছে । আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তারপরও তাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
মোবারক আলীর বাবা দিনমজুর এনামুল হক বলেন, আমিও মোবারক আলীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। সে নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করছে। আমার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মোবারকের চাহিদা সবসময় মেটাতে পারি না। তবে আমি চেষ্টা করব মোবারক যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.