|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
অগ্রহায়ণের আকস্মিক বৃষ্টিতে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের প্রায় ৫০০০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত ধানের বীজতলা পানির নিচে-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৬ ডিসেম্বর, ২০২১
সকল স্বপ্নগুলো ধুলিস্যাৎ।ধার-দেনানকইরে কোন মতে দেড় বিঘে জমিতে সরিষা চাষ করছিলাম। জমির লক্ষণ ভালো হইছেলো। একটু সপ্ন ছিল নিজ হাতের সরিষার তৈল খামু। কিন্তু তা আর হলোনা। এর মধ্যিই বৃষ্টি নামলো গতকাল। থামার কোন লক্ষণ দেখছি না। সরিষার জমিতে হাটু পানি। এই বৃষ্টির জন্য এত টাহার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেল। এমনই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ওটারচর গ্রামের কৃষক কাইয়ুৃম সরকার।
শুধু এই কৃষকই না, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে উপজেলার সকল কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মতলব উত্তর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ টি ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘেরের পাড়ে ও উঁচু জমিতে চাষাবাদ করা আগাম ও নাবি সবজি সড়িষা,ভুট্টা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে প্রায় ১০০০ হেক্টর জমির সবজি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। সরিষার জমিতো সব শেষ। পাকা আমন ধান শুয়ে পড়েছে পানির নিচে। এতে কৃষকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে ছেংগারচর পৌরসভা র বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, শাকসবজি,ধানের বীজতলা, সরিষা ও ভূট্টা চাষ করা জমিতে পানি জমে আছে। কারো তৈরি বীজ তলায় অন্কুরোদগম হওয়া ধান আর বুনতে পারছেন না,কারণ বীজতলা পানির নিচে। চরঅঞ্চলে ও বাঁধের ভিতরে উচ্চমূল্যের সবজি যেমনঃ গোলআলু,ক্ষিরা,শসা, লাউ, করোলা, পেপে, ঢেড়শ, ঝিঙ্গা, টমেটোর চারা, বেগুন, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, গিমা কলমি, ধনিয়া পাতা, লালশাক, ফুলকপি,বাধা কপি ও অন্যান্য সবজির ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকরা পড়েছে বিপাকে।
সাদুল্যাপুর গ্রামের আধুনিক শিক্ষিত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সরকারি ছেংগারচর কলেজ এর অনার্স পড়ুয়া ছাত্র মোঃশরীফুল ইসলাম জানান, তিনি ৬ বিঘা জমিতে ঢেঁড়স, ডাটা, লাল শাক মূলা, লাউ, ধনিয়া পাতা,ভুট্টা,সিম,আমন ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে ঢেড়স ব্যতিত পুরো সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা। এদিকে ধানের বীজতলা পানির নিচে। এতে তার প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওটারচর গ্রামের কৃষক আলামিন সরকার জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে মুলা ফুলকপি, ভূট্টা লাল শাক চাষ করেছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে তার প্রায় ১ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ওটারচর গ্রামের কৃষক মোঃ কবির হোসেন সিকদার ধনিয়া পাতা চাষ করেছিলেন প্রায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।কৃষক মোঃ মরতুজ আলী দেওয়ান, তাইজ উদ্দিন দেওয়ান, মোহাম্মদ মালেক ভূঁইয়া , মোঃ মোকসেদ আলী দেওয়ান, মোঃ শাহ আলম সরকার, সাহেব আলী সরকার, জসিম উদ্দিন সরকার, ফয়েজ মিয়া, নজরুল ইসলাম মিয়াজী মোঃ মজিবুর রহমান প্রদান, বজলুর রহমান প্রধান সহ আরো অনেকে প্রায় লক্ষ্য লক্ষ টাকা সমমূল্যের সবজি ও ধানের বীজতলা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সুলতানাবাদ ইউনিয়নের টরকি গ্রামের আধুনিক শিক্ষিত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মিঠুর ভুট্টা, সরিষা ও ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজি পানির নিচে। তার মতামত সফল আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া সপ্ন নিয়ে কৃষিতে যোগদিলাম কিন্তু পথিমধ্য এমন বাধা আমাকে বাকরুদ্ধ করে তুলছে।
জোরখালী গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন, আবুল কালাম, খলিল,আদুর বিটি গ্রামের কৃষক মোঃ সেকুল, শুফল, টমেটো করলা ও লাউ চাষী মোঃ মুকুল হোসেন সহ আরো অন্যান্য সবজি চাষি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মিলারচর গ্রামের মামুন হোসেন , গজরা ইউনিয়নের চাষী শরীফুল ইসলাম, দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শকিলসহ একাধিক কৃষকসহ প্রায় শতাধিক কৃষক ও বাগানবাড়ি ইউনিয়নের একাধিক কৃষকসহ প্রায় শতাধিক কৃষক, জহিরাবাদ ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক কলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষক শহিদুল ইসলাম সহ শতাধিক কৃষক ধানের বীজতলা ও সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে। ইসলামাবাদ ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক। এসকল কৃষকরা জানান জানান, এই অতিবৃষ্টির কারণে তারা কোন শাক বা সবজি ফসল ঘরে উঠাতে পারবে না। এতে তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই প্রণোদনার মাধ্যমে তারা সার বীজ ও নগদ টাকা প্রদান করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
তবে মতলব উত্তরে শাকসবজির ফলন ভাল হয়েছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে সবজির দাম দ্রুত অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে সার বীজ ও কিছু নগদ টাকা দিলে তারা ক্ষয় ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
সকল কৃষকদের মূল দাবি হলো মতলব উত্তরের পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত খাল থাকলেও অবৈধ বাধ ও দীর্ঘ দিন ধরে খনন না হাওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বারবার কৃষকরা বারবার দাবি উঠলে ও কতৃপক্ষের তেমন কোন সাড়া নাই। যার ফলে কৃষকরা নিঃস্ব হচ্ছেন বারংবার। তাই সকল কৃষকদের পক্ষে, অনতিবিলম্বে এ খালগুলো খননের দাবি জানান কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ, মতলব উত্তর উপজেলা,চাঁদপুর। এর সকল সদস্যগন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.