২১ আগস্টে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে গ্রেনেড হা’ম’লার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের নারকীয় হ’ত্যাযজ্ঞের করুণ স্মৃ’তিচারণ করেছেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেখলাম আমা’র গায়ে শুধু র’ক্ত পড়ছে: শেখ হাসিনা
শনিবার (২১ আগস্ট) সকালে একুশে আগস্টের ১৭তম বার্ষিকীতে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সমাবেশে গণভবন থেকে ভা’র্চুয়ালি যু’ক্ত হয়ে তিনি সেদিনের বর্বরোচিত ঘটনার বর্ণনা দেন। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জানান, একটির পর একটি গ্রেনেড বি’স্ফোরণের সময় সাবেক মেয়র মোহাম্ম’দ হানিফসহ দলের নেতারা মানববর্ম তৈরি করে তাকে ঘিরে রেখেছিলেন অস্থায়ী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাকের ওপর। তিনি বলেন, আম’রা এই কর্মসূচিটা মুক্তাঙ্গনে করতে চাইলেও বিএনপি সরকার অনুমতি দেয়নি। অনেক চেষ্টা করে যখন অনুমতি পেলাম না, তখন আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এ জন্য পোস্টার করা হলো, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। ঢাকাসহ সারা দেশে এ কর্মসূচির প্রচার করা হলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক আগের দিন রাত সাড়ে ১১টা বা ১২টার দিকে একটা পারমিশন এলো, মুক্তাঙ্গনে করার বিষয়ে। কিন্তু এত গভীর রাতে দেওয়ার অর্থটা কী? ওই চিঠি তো খুলে পড়ারও কথা নয়। বিস্ময়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে যে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড মে’রে হ’ত্যার প্রচেষ্টা চালাবে, এটা কেউ ভাবতেও পারেনি। সেদিনের স্মৃ’তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বি’স্ফোরণের শব্দ হতেই হানিফ ভাই, মামুন, নজির সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি ওঠার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ওরা উঠতে দেয়নি। আমি দেখলাম, আমা’র গায়ে শুধু র’ক্ত পড়ছে। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো হানিফ ভাইয়ের মা’থায়, শরীরে লাগছে। আর তার শরীরের র’ক্ত পড়ছে আমা’র শরীরের ওপর। শেখ হাসিনা বলেন, জুলাই মাসে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর পরই দুর্বৃত্তায়ন, অ’ত্যাচার, নি’র্যা’তন, শুরু করেছিল বিএনপি। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হ’ত্যা গু’ম, না’রীদের পাশবিক নি’র্যা’তন শুরু করে। পা’কিস্তান হানাদার বাহিনীর একাত্তরের মতো একই কায়দায় নি’র্যা’তন শুরু করে বিএনপি। এসব হ’ত্যা নি’র্যা’তন হা’ম’লার প্রতিবাদে আম’রা শান্তিপূর্ণ র্যালি করার সিদ্ধান্ত নিলাম সেদিন। ঢাকাসহ সারা দেশে এ কর্মসূচির প্রচার করা হলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক আগের দিন রাত সাড়ে ১১টা বা ১২টার দিকে একটা পারমিশন এলো, মুক্তাঙ্গনে করার বিষয়ে। কিন্তু এত গভীর রাতে দেওয়ার অর্থটা কী? ওই চিঠি তো খুলে পড়ারও কথা নয়। বিস্ময়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে যে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড মে’রে হ’ত্যার প্রচেষ্টা চালাবে, এটা কেউ ভাবতেও পারেনি। তিনি বলেন, এর আগে খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়ে আমা’র নাম ধরে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। কোটালিপাড়ায় বো’মা পুঁতে রাখার আগে বলেছিল, একশ’ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন বক্তৃতা শেষ করে মাইকটা রাখতে যাব, এরই মধ্যে ফটো সাংবাদিক গোর্কি বলল, আমি তো ছবি নিতে পারিনি। ট্রাকের চালকের উপরের ছাদে বসা অন্য সাংবাদিকরাও বলার পর তাদের কথায় যখন আমি দাঁড়ালাম। এরইমধ্যে গ্রেনেডের আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে হানিফ ভাই, মামুন ওরা আমাকে ঘিরে ধরল। একটার পর একটা গ্রেনেডের আওয়াজ হচ্ছে। আমি বারবার ওঠার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ওরা ছাড়েনি। দেখলাম আমা’র গায়ে শুধু র’ক্ত পড়ছে। তিনি বলেন, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারদিকে ধোঁয়া। ঠিক জানি না আল্লাহ কীভাবে বাঁ’চালেন। আমা’র গায়ে একটা স্প্লিন্টারও লাগেনি। কিন্তু শব্দে কানের ক্ষতি হলো। ডান দিকের কানে শুনতে পাই না। সেই ট্রাকের ভেতরের অনেকেই আ’হত হয়েছেন। ট্রাকের সিঁড়িতে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তারাও আ’হত হন। এসময় তিনি বলেন, একটা পর্যায়ে যখন থামল, আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমা’র সারা শরীর র’ক্তাক্ত দেখে ওরা মনে করল আমি আ’হত। আমি বললাম না, আমা’র কিছু হয়নি। দেখলাম হানিফ ভাইয়ের মা’থাসহ সারা শরীর র’ক্তাক্ত। ওখানে যারা ছিল প্রত্যেকেই আ’হত। এরপর গাড়িতে ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাড়িতে উঠতে যাবো। দরজা খুলে মাহবুব দাঁড়ানো। তখনই গু’লি এলো। আর সেই গু’লিতেই মাহবুব মা’রা গেল। আরও দু’-একটা গু’লি গাড়িতে এসে লাগল। আমাকে একটানে চালিয়ে নিয়ে গেল। পরে ওখানের ঘটনা শোনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ যখন ছটফট করছিল সাহায্যের জন্য, পু’লিশ এগিয়ে আসেনি। উল্টো পু’লিশ লা’ঠিচার্জ আর টিয়ার গ্যাস মা’রতে শুরু করল। আমাদের নেতাকর্মীরা সাহায্য করতে ছুটে আসছে, পু’লিশ তাদের আসতে দিচ্ছে না। যারা আক্রমণকারী এদের রক্ষা করতেই টিয়ার গ্যাস মা’রা ও লা’ঠিচার্জ করা হয়েছে। একটা সরকারের যদি সহযোগিতা না থাকে তাহলে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে না বলে এসময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাড়িটা যখন সুধা সদনে ঢুকল, আমি যখন নামলাম, রেহানা চি’ৎ’কার করল। আমি বললাম, আমা’র কিচ্ছু হয়নি। বললাম, হানিফ ভাই আমাকে ধরেছিল তার সারা শরীরে স্প্লিন্টার। সেই র’ক্তই আমা’র গায়ে। ওখানে দাঁড়িয়েই খোঁজ নিতে থাকলাম আমাদের কে কোথায় আছে। ড্রাইভা’র আলী হোসেন আর শাহ’জাহানকে পাঠালাম যাদের পারও হাসপাতা’লে নিয়ে যাও। চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। তিনি বলেন, ঘটনার পর সংসদে এ নিয়ে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। শোক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলো। খালেদা জিয়া সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, ওনাকে আবার কে মা’রবে? উনি তো নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছে। আমি বললাম, আমা’র হাতে তো কোনো ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল না, কিছুই ছিল না। আর আমি কবে এভাবে গ্রেনেড মা’রায় এক্সপার্ট হয়ে গেলাম তা তো জানি না। তিনি আরও বলেন, সেদিন বিএনপি-মনা কোনো চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছিল না। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আ’হতকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাদের মাইন্ডের যারা তারা ছুটে এসে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনাস্থলে একটি অক্ষত গ্রেনেড পাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন আর্মি অফিসারকে এটাকে আলামত হিসেবে সংগ্রহের কথা বললে তাকে ধমক দেওয়া হয়। পরে সেই গ্রেনেডটাধ্বং,স করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরে জানা গেছে ডিজিএফআইয়ের একজন অফিসার গ্রেনেড হা’ম’লার কথা হেড কোয়ার্টারে ফোন করে জানালে, তাকে ধমক দেওয়া হয়। পু’লিশের যেসব কর্মক’র্তা আগে থেকে জানতো না তারা হেডকোয়ার্টারে ফোন করলে তাদেরও ধমক দেওয়া হয়। তাদের ওখান থেকে সরে যেতে বলা হয়। এরপর আলামত নষ্ট করার জন্য, সিটি করপোরেশনের গাড়ি জায়গা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেলল। যুবলীগের কর্মীরা যেখানে গ্রেনেড পড়েছিল সেখানে লাল পতাকা, ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করল। এই কাজগুলো তো ছিল সরকারের-পু’লিশের। কিন্তু তারা তা করেনি। তারা আলামত রাখতে চাইনি। তিনি বলেন, ঘটনার পর সমালোচনার কারণে, একজন সাবেক বিচারপতিকে দিয়ে ত’দ’ন্ত কমিটি গঠন করা হলো। সেই ত’দ’ন্ত কমিটি আবিষ্কার করলো, পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মিথ্যা মা’ম’লা দিয়ে আমাদের কর্মী মগবাজারের মোখলেসকে গ্রে’প্তা’র করল। অ’ত্যাচার নি’র্যা’তন করে তাদের থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করল। এরপর নোয়াখালীর কোন জজ মিয়া। একটি গরিব ঘরের ছে’লে। টাকা পয়সা দিয়ে, তার পরিবার লালনপালন করবে সেই কথা দিয়ে তাকে দিয়ে এক কাহিনী রচনা করল। দেশের গোয়েন্দা সংস্থা দিনে-দুপুরে এভাবে শহরের ভেতরে এত গু’লি, গ্রেনেড যদি মে’রে যেতে পারে তাহলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছিল? তারা কী নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল? এটা হলে তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কীভাবে?