যতোদিন এই বাংলায় একজন মুজিবপ্রেমি বেঁচে থাকবে ততোদিন জ্বলবে এই আগুন।১৯৭৫ সালের সেই ভয়াল কালো রাতে নরপিশাচদের তাজা গুলিতে শহীদ হন বাঙালি জাতীর অবিসংবাদিত নেতা বাঙ্গালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাহার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল,শেখ জামাল,শেখ রাসেল,শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল,শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল,বঙ্গবন্ধুর সহোদর ভাই শেখ আবু নাসের,এস,বি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল,সেনা সদস্য মাহবুবুল হক,প্রায় একই সময়ে নিজ বাসায় শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর বোনের ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি,তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শেখ আরজু মনি,নিজ বাসায় শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত,নাতি সুকান্ত বাবু,তার বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত, আত্মীয় বেন্টু খান।
১৫ ই আগষ্টে বাঙালি জাতী তথা পুরো বাঙলা অন্তর থেকে স্বরন করবে এই মহান শহীদদের। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন -সংগ্রামের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষনের মাধ্যমে তার বজ্রকন্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। তার সেই অগ্নিঝরা বানী "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম" শুনে বাঙ্গালি জাতি বাঙালি জাতী স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিল শোষকদের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর সেই অগ্নিঝরা মন্ত্র শুনেই বাঙালি জাতী হয়ে উঠে এক লড়াকু জাতি হিসেবে, হয়ে উঠে বীরের জাতি হিসেবে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ পরবর্তী পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে এসেই ধ্বংসপ্রায় বাংলাদেশ কে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য বাঙালি জাতীকে নিয়ে এক মহাযুদ্ধে নেমে পড়েন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত দেশীয়-বিদেশী অশুভ শক্তি তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে, তারা বিভিন্নরকম ষড়যন্ত্রের বীজ বুনতে থাকে এবং এদেশের কিছু লোভাতুর শ্রেনীর মীরজাফরদের সহযোগিতায় তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ইতিহাসের অতি ঘৃন্য ও নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ঐ নরপশুর দল সেদিন শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি তারা হত্যা করেছে একটি জাতীকে,একটি স্বাধীন দেশকে।যেদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা,রুপকার বাঙালি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐ হায়েনার দল সেদিন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা ক্ষমতার মসনদে বসে বঙ্গবন্ধুর প্রবাসী দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা কে দেশে এসে তাদের পরিবারের লোকদের রক্তে রঞ্জিত দেহটুকুও দেখার সুযোগ দেয়নি। আড়াল থেকে এই নির্মম গণহত্যার কুশীলবরা ক্ষমতার মসনদে বসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাজা মওকুফ করতে কুক্ষাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারিতকরণ করে এবং ঘাতকদের বিচার আওতায় না তৎকালীন সৈরশাসকগুষ্ঠি ১৯৭৬ সালের ৮ ই জুন ১৫ ই আগষ্টের শহীদের রক্তকে কলঙ্কিত করে হত্যাকান্ডি সম্পৃক্ত ১২ জনকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সূযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসিন হলে খুনি নরপিশাচদের বাঁচানোর জন্য তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর জারীকরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার পথ উন্মুক্ত করেন। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসিন হওয়ার পর ২০০৯ সালে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৫ জনের রায় কার্যকর করা হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকা অপরাপর মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল দিবাগত রাতে ১৫ ই আগষ্টের নরঘাতক খুনি আবদুল মজিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর মাধ্যমে বাঙালি জাতী কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়। এই শোকের দিনে বাঙালি জাতীর অন্তরের দাবী ১৫ ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালের হত্যাযঞ্জে অংশগ্রহণ কারী বিদেশের মাটিতে পালিয়ে বেড়ানো বাকী খুনি নরপিশাচদের দেশে এনে তাদের দন্ড আশু কার্যকর করার ব্যবস্থা করা হোক। সবশেষে ১৫ ই আগষ্টের মহা শোকের দিনে বঙ্গবন্ধু সহ শহীদ হওয়া দেশ মাতৃকার সূর্য সন্তানদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।