পাইকগাছা শিবসা নদীর চরভরাটি জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ঘন সামাজিক বনায়ন। অপরূপ সৌন্দর্য্য বনটি যেন হাতে আঁকানো ছবির মত। বিকাল হলেই দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। আপরুপ সৌন্দর্য্যমন্ডিত জায়গাটি ঘিরে হতে পারে বিনোদনের পার্ক। পৌরসভার শিববাটি ওয়াপদা সড়কের পাশে শিবসা নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। বনে রয়েছে গোলপাতা, কেওড়া, উড়া, কাঁকড়া, গেওয়াগাছ। পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসে বন থেকে। এ দেখে মনে হয় সুন্দরবনের একটি অংশ। বন কর্মকর্তার জানান, নদীভাঙ্গন রোধ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে এলাকা রক্ষা, সরকারি জমি অবৈধ দখলদারমুক্ত রাখা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পাখির আবাসস্থল গড়ে তোলা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ওই বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয়দের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বাতিখালী চর বনায়ন সমিতি। উপজেলার লতা ইউনিয়ান, সোলাদানা ইউনিয়নে, দেলুটি ইউনিয়ন ও গড়ুই খালী ইউনিয়নে বিভিন্ন সমিতি দেখাশুনার করে থাকে। বাতিখালী সমিতির সভাপতি জি এম এম আজহারুল ইসলাম বলেন, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দখলে নিতে থাকেন প্রভাবশালীরা। তাই ২০১০ সালে প্রশাসনের সহযোগিতায় নদীর ধারে গড়ে তোলা হয় ওই বন। উপজেলা বন কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, পাইকগাছা উপজেলার উপকূলীয় এলাকাটি নদী দিয়ে বেষ্টিত। কিন্তু নদীগুলো ধীরে ধীরে চর পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর চর পড়া সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছিল স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাঁরা সেখানে ঘের করে মাছের চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে জমিগুলো দখলমুক্ত রাখতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ওই বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুধু শিববাটির চরে নয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা চরে এমন বনায়ন করা হয়েছে প্রায় ৫৫ হেক্টর। এর মধ্যে সোলাদানা ইউনিয়নের ভেকটমারী ও পাটকেলপোতা গ্রামে সাড়ে ২৩ হেক্টর, লতা ইউনিয়নের দক্ষিণ হাড়িয়া গ্রামে ১২ হেক্টর, দেলুটি ইউনিয়নের দেলুটি গ্রামে সাড়ে ১৪ হেক্টর ও পাইকগাছা পৌরসভা এলাকার সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে ওই বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। বেতবুনিয়া চরবনায়ন সমিতির সভাপতি শহিদ হোসেন জানান, চরভরাটে জায়গা অনেকেই দখল করে মৎস্য চাষ করছে। অনেকেই আবার ইজারা গ্রহনের নাম করে ৩০ থেকে ৪০ বিঘা জমি দখলে রেখেছে। বাকি জমিতে বনায়ন করেছি। লতা ইউনিয়নেন সভাপতি গৌতম রায় জানান, প্রশাসনের সহযোগীতায় সমিতির সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করে নদীর চরে বনায়ন করেছি। এ বনে গোলপাতা এবং কেওড়া গাছ ভালো হয়েছে। কিছু মানুষ নিজেদের জমি দাবি করে বনটিকে তছরুপ করছে। তা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যেমে নিরসন হয়েছে। দেলুটি ইউনিয়নের আহাদ আলী জানান, আমাদের ইউনিয়নে চরভরাটি জায়গায় সাড়ে ১৪ হেক্টর জমিতে বনায়ন করা হয়েছে। আমরা বনটিকে দেখাশুনা করে বড় করে তুলেছি। এ বনের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, শিবসা নদী পলি জমে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে অনেক জমি চরভরাটি হয়ে পড়েছে। তাই দখল মুক্ত রাখতে সেটিকে বনায়ন প্রকল্প হিসেবে হাতে নেয়া হয়েছে। এখানে একটি পার্ক গড়ে তুলতে পারলে ভাল হতো। কথা হয় পাইকগাছা- কয়রা সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর সাথে। তিনি জানান, পাইকগাছা পৌরসদরে তেমন কোন পিকনিক স্পট নাই। ইতোমধ্যে আমি দর্শণার্থীদের বসার বেঞ্চের জন্য ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, সুন্দরীগাছ না থাকলেও ওই বনগুলো সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। বনের প্রকৃতি এমনই হয়েছে বোঝাই যাবে না এটা সুন্দরবনের অংশ নয়।