|| ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বিরামপুরে সরকারি বিদ্যালয়ের উপর ভেঙ্গে পড়া গাছটি অপসারণের কোন পদক্ষেপ নেই- দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৩১ জুলাই, ২০২১
দুই মাস আগে প্রচন্ড এক ঝড়ে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর ভেঙে পড়ে বিশাল আকৃতির একটি কৃষ্ণচূড়ার গাছ। অনেক দিন পার হলেও গাছটি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে, গাছের চাপায় নষ্ট হচ্ছে বিদ্যালয়ের টয়লেট, দেয়াল, শ্রেণিক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র। তবে কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, খুব দ্রুুত সময়ের মধ্যে গাছটি সরানো হবে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯২২ সালে ৯১ শতক জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর এটি এ এলাকার সর্ব প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রথমে এটি ছাদ দিয়ে নির্মাণ করা হলেও পরবর্তীতে ছাদ ভেঙে টিনের ছাউনি দেয়া হয়। উপজেলায় অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় আধুনিকায়ন করা হলেও এই বিদ্যালয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ফলে বিদ্যালয়টির এখন বেহাল অবস্থা। গাছটি গত দুই মাস আগে ভেঙে পড়লেও গাছ তুলতে দাফতরিক চিঠি চালাচালিতেই এখন পড়ে আছে ওই ভাঙা গাছটি।
সরেজমিনে ওই বিদ্যালয় চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনে একটি সুবিশাল একটি মাঠ। বিদ্যালয়ে একটি অফিস কক্ষসহ ৪টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বারান্দায় পড়ে রয়েছে বস্তা ভর্তি আবর্জনা। বিদ্যালয়ের সামনের চত্বরে সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগানো রয়েছে। অফিস কক্ষের পেছনে টয়লেটের ভেতরের অংশে একটি বিশাল আকৃতির কৃষ্ণচুড়ার গাছ নিমর্জিত অবস্থায় অফিস কক্ষের টিনের চালার উপর পড়ে আছে। ওই গাছের ডালে বসেই খেলাধুলা করছে ওই এলাকার কোমলমতি শিশুরা। গাছের ডালগুলো শুকিয়ে যাওয়াই যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর পাশের্^র বাসিন্দা সায়ের উদ্দিন বলেন, ‘দুই মাস হল ঝড়ের রাতে গাছটি বিদ্যালয়ের উপর পড়ে যায়। করোনার কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোন শিক্ষক এখানে খোঁজ-খবর নিতে আসেন না। ফলে তাঁদের অবহেলায় বিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাড়ার ছোট ছেলে-মেয়েরা ওই ভাঙা গাছের ডালে বসে খেলাধুলা করে।
বিদ্যালয় সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের্^র বাসিন্দা প্রবীণ ব্যক্তি আজিজার রহমান কাজী বলেন, এটি হচ্ছে অত্র ইউনিয়নের প্রথম প্রাইমারি স্কুল। শুরু থেকে সামনের দিকে গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। টয়লেটের অংশের ভেতরে কৃষ্ণচুড়ার একটি পুরনো গাছটি ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ সময় পার হলেও ভেঙে পড়া গাছটি না সরানোর কারণে এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও মরণ ফাঁদ হয়ে আছে। এছাড়া বিদ্যালয় ভবনটির অবস্থা এখন অনেকটাই জরাজীর্ণ ও ভূতুড়ে। গত দেড় বছর ধরে করোনার কারণে বিদ্যালয়টি বন্ধ। এখন সন্ধা হলেই বিদ্যালয়ের বারান্দাটি মাদক সেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মমিনুল ইসলাম জানান, ঝড়ে ভেঙেপড়া গাছটি বিদ্যালয়ের উপর ভেঙে পড়ায় বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অনেক ক্ষতি হয়েছে। করোনার কারণে বিদ্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। তবে গাছটি কাটার বিষয়ে ইতোমধ্যে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। টেন্ডার হলেই গাছটি খুব দ্রুুত সময়ের মধ্যে কাটা হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিনারা বেগম বলেন, ঝড়ে ভেঙেপড়া গাছটি কাটার বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বনবিভাগ গাছের টেন্ডারের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করে দেবেন। এ ব্যাপারে বনবিভাগের ধীরগতির কারণে গাছটি কাটতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছি, কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, ‘করোনা মহামারির প্রকোপ কমে গেলেই সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। বিদ্যালয়ের উপর ভেঙে পড়া কৃষ্ণচুড়ার গাছটি সরানোর জন্য ইতোমধ্যে বনবিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। বনবিভাগ গাছটির মূল্য নির্ধারণ করে দিলেই সেটি কাটা হবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.