|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর লাখাই অংশে ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২২ মে, ২০২১
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের নিকট খোয়াই নদীর লাখাই অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণ কাজে ত্রুটি, প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরু থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড লাখাই উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড হবিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একরামুল হক প্রকল্পটির তার ইচ্ছা অনুযায়ী মনগড়াভাবে প্রকল্পের কাজ করে চলেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও তার অনুগত লোকজনদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনটি স্কীমের জন্য তিনটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যদের প্রকল্প এলাকায় জমির মালিক হওয়ার নিয়ম থাকলেও তথ্য আছে এসব কমিটিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রায় সবারই প্রকল্প এলাকায় জমিজমা নেই। একাধিক কমিটিতে একই ব্যক্তি স্থান পেয়েছেন। এমনকি ঠিকানা বদলিয়ে অন্য জেলা ও উপজেলার লোকদেরকেও রাখা হয়েছে। জানা যায় এলাকায় প্রভাবশালী বলে পরিচিত মুখলিস মেম্বার কে একাধিক কমিটিতে রেখে তার আত্মীয়স্বজন এবং অনুগতদেরকেই কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তথ্য আছে, মুখলিস মেম্বারের এর বিরুদ্ধে গত বছর মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ২৫ শত টাকা করে দেয়ার তালিকায় নিজের ব্যক্তিগত নাম্বার ব্যবহার করে উপকারভোগীদের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাবিটা প্রকল্পের উপজেলা কমিটির অন্যান্য সদস্যদেরকে ও এসব ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয় বলে সূত্রে জানা যায়। কমিটির এক সদস্য জানান বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকে অদ্যবধি এ বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করা হয়নি। বাঁধ এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বাঁধে মাটি ভরাট, প্রশস্ততা ও স্লোপ এস্টিমেট অনুযায়ী কম রয়েছে। বাধের স্লোপ তুলনামূলক খাড়া হওয়ায় নদীর সামান্য স্রোতেই ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাঁধ থেকে মাটি সংগ্রহের স্থানের দূরত্ব ২ থেকে ৩ মিটার থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় বাঁধের গোড়া থেকেই অনেক গভীর করে মাটি উত্তোলন করা বাঁধের সাথে খোয়াই নদীর মধ্যবর্তী মাটি ভেঙে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফরিদপুর গ্রামের খোয়াই নদী সংলগ্ন স্থানটিতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি সেজন্য নদী সংলগ্ন বাড়ীঘরগুলো যেকোনো সময় ধ্বসে পড়ে নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ফরিদপুর গ্রামের বাঁধ সংলগ্ন স্থানের বাসিন্দা বকুল মিয়া জানান গ্রাম সংলগ্ন স্থানটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হলেও এখানে বাঁধ নির্মাণ কিংবা গ্রামটি রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জানা যায়, লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং গত ২ এপ্রিল বাধটির ৫, ৬ ও ৭ নং স্কীম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি বাঁধের মাটি ভরাট, প্রশস্ততা ও স্লোপ এস্টিমেট অনুযায়ী না পাওয়ায় এবং বাঁধের স্লোপ তুলনামূলক খাড়া হওয়ায় নদীর সামান্য স্রোতে বাধটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দেখতে পান। তিনি এই ত্রুটি সমাধানের বিষয়ে স্কীমগুলির সভাপতি ও সদস্য সচিব এবং উপজেলা কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি কে মৌখিক ভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু এরপর ১৪ এপ্রিল ওই স্কীমগুলি তিনি আবারও পরিদর্শন পরে কাজের কোন অগ্রগতি দেখতে পান নি। পরবর্তীতে তিনি উপজেলা কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব এবং উক্ত কাজে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসারকে এস্টিমেট অনুযায়ী ওই প্রকল্পের কাজ সম্পাদন করর যৌথ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এ বিষয়ে প্রকল্পটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী একরামুল হকের সাথে যোগাযোগ করে প্রকল্পটির পিআইসি কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বাঁধ নির্মাণের ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলি ঠিক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজং জানান, এ-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.