|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
জোশের কারণে এসব মন্তব্য করে ফেলেছি:মামুনুল হক-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২০ এপ্রিল, ২০২১
ধর্মীয় বা অন্য সমাবেশে উত্তেজক বা উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার কারণ হিসেবে ‘জোশ চলে আসার’ কথা পুলিশকে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক।
রোববার গ্রেপ্তারের পরদিন সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় হেফাজতের এই যুগ্ম মহাসচিবকে, যিনি ধর্মভিত্তিক দল খেলাফতে মজলিসেরও একজন নেতা।
তাকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ।
মঙ্গলবার বিকেলে নিজ কার্যলয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিসি হারুন। হেফাজত নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য পাওয়া গেল, সে বিষয়
নিয়ে এসব কথা বলে তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে মামুনলকে তার কয়েকটি ওয়াজের ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে তিনি সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়েছেন। প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিককে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এসব বক্তব্যের জানতে চাওয়া হলে মামুনুল বলেন, ‘জোশের কারণে এসব মন্তব্য করে ফেলেছি।’
মামুনুল হকের বিভিন্ন বক্তব্যে সরকারকে প্রায়শই হুঁশিয়ার করে দেন। তাদের কথা না শুনলে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেয়ার কথাও বলেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষুদ্র শক্তির অধিকারী হলেও গত ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমের সমাবেশে মামুনুল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যদি নরেন্দ্র মোদি আসেন, তাহলে তারা সরকার পতনের ক্ষেত্রে তৈরি করবেন।
২৬ ও ২৮ এপ্রিল নজিরবিহীন সহিংসতার পর ৩০ এপ্রিল বায়তুল মোকাররমের সমাবেশে তিনি এমনও বলেন, তারা চাইলে দেশের সব কটি থানা অবরোধ করতে পারেন।
প্রায়শই ধর্মীয় অথবা অন্য জলশায় প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে কর্মী সমর্থকদের উত্তেজিতও করে থাকেন মামুনুল হক। স্বপ্ন ছিল ক্ষমতা দখল
ডিসি হারুন জানান, মামুনুলের ধারণা ছিল, তারা ব্যাপক শক্তি অর্জন করেছেন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে ফেলতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘কখনো হেফাজত কখন আবার ইসলামকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছাকে পূরণ করতে চেয়েছিলেন মামুনুল হক। এ জন্যই ইসলাম ও মাদ্রাসার ছাত্রদেরও ব্যবহার করেছেন।’
হারুন বলেন, ‘এ জন্যই তিনি হেফাজতের বিভিন্ন প্রোগ্রামে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন মামুনুল। তার বক্তব্যের কারণে সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ কুদরতে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ঘাড় ধরে হেফাজতের সামনে মাথা নত করে দিয়েছি- মামুনুলের এই বক্তব্যে পরিষ্কার বোঝা যায় তিনি রাষ্ট্রীয় শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করেছে, অর্থাৎ তার কাছে রাষ্ট্র আইন শৃঙ্খলা কিছুই না।’
ডিসি হারুন বলেন, রিমান্ডে এনে তাকে প্রশ্ন করা হয় তিনি একদিকে একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হয়েও হেফাজতের মত অরাজনৈতিক সংগঠনেও পদ নিয়ে আছেন কেন। এ প্রশ্নের জবাবে মামুনুলের কোনো জবাব দেননি।
মামুনুল হকের পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের মদদ আছে কি না, সেই বিষয়টিও জানার চেষ্টা চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, ‘কেউ ইন্ধন দিয়ে থাকলে ও তাকে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’
বাদীকে মারধর বিষয়ে তার বক্তব্য
কয়েক বছর আগে তাবলিগ জামাতে বিভেদের জেরে মাওলানা সাদপন্থি একজনকে মারধর করা হয় মোহাম্মদপুরে। আর আক্রমণের শিকার সেই ব্যক্তিও মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ডিসি হারুণ জানান, বাদীর অভিযোগ ধরে ও সেদিনের হামলার ভিডিও দেখিয়ে মামুনুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘মামুনুল ও তার অনুসারীরা মূলত তাবলিগের অন্য গ্রুপ জুবায়েরপন্থি। তাই মামুনল ভেবেছিলেন সাদপন্থিদের পিটিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দিলে তারা দুর্বল হয়ে যাবেন।
তৃতীয় রিমান্ডে আরও তথ্য আসবে বলে ধারনা এই পুলিশ কমকর্তার
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.