|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বডার থেকে আসছে পাওডার,তৈরি হচ্ছে ফেনসিডিল-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১২ মার্চ, ২০২১
তরল ফেনসিডিল নয়, এবার আসছে ফেনসিডিল তৈরির পাউডার। কোডিন ফসফেট নামের ওই পাউডারের দাম প্রায় হেরোইনের সমান। মাত্র ৫০ গ্রাম পাউডার দিয়ে তৈরি করা যায় অন্তত ৫০০ বোতল ফেনসিডিল, মাদক রাজ্যে যার মূল্য কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকা। মাদক ব্যবসায়ীরা এখন আর বোতলজাত বা তরল ফেনসিডিল না এনে ঝামেলা এড়াতে কোডিন ফসফেট নিয়ে আসছে। এ দিয়ে ঘরে বসেই তারা ফেনসিডিল তৈরি ও বোতলজাত করে তা মাদক মার্কেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের অভ্যন্তরেই ফেনসিডিল তৈরির বিষয়টি অত্যন্ত আতঙ্কের।
র্যাব-৩ শনিরআখড়া এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস আটক করে। মাইক্রোবাসের চালক কামাল হোসেনকে আটকের পর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মনি আক্তার (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ১৭০ বোতল ফেনসিডিল, বিপুল তরল ফেনসিডিল, ফেনসিডিলের লেবেল, কর্ক, ফেনসিডিল তৈরির পাউডার এবং রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করে। মনি আক্তার জানায়, জামাল ও মাসুদ নামের দুই মাদক ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে ফেনসিডিল তৈরি করে তা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট প্যাকেট এবং বোতলে ভরে সরবরাহ করে আসছে। মনির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র্যাব সদস্যরা কমলাপুর এলাকা থেকে আনোয়ার পারভেজ নামের এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতর করে তার কাছ থেকে তিন বোতল ফেনসিডিল এবং একটি প্লাস্টিকের বোতলে তরল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।
র্যাব এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত পাউডারটির নাম কোডিন ফসফেট। এর সাথে স্পিরিট, চিনির পানি ও কর্পূরজাতীয় একটি পদার্থ মিশিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করা হয়। ভারতের সীমান্ত এলাকায় এরূপ শত শত ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে। ওই সব কারখানায় তৈরি ফেনসিডিল সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে এ দেশের মাদক বিক্রেতারা। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের কারণে এখন আর ফেনসিডিলের বোতল ও তরল ফেনসিডিল নিয়ে আসা নিরাপদ নয়। এ কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশল নিয়েছে। তারা এখন ফেনসিডিল তৈরির পাউডার কোডিন ফসফেট নিয়ে আসছে খুব সহজেই।
সূত্র জানায়, ৫০ গ্রাম কোডিন ফসফেট পাউডার দিয়ে তৈরি করা যায় প্রায় ৫০০ বোতল ফেনসিডিল। খয়েরি রঙের এই পাউডার হেরোইনের চেয়েও দামি। এক চা-চামচ পাউডার দিয়ে ১০ লিটার ফেনসিডিল তৈরি করা যায়। দেশে কোডিন পাউডার আটকের ঘটনা এটিই প্রথম বলে সূত্র জানায়। এমনকি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্খার সদস্যদেরও অনেকে সহজে এই পাউডার শনাক্ত করতে সক্ষম নন বলে একটি সূত্র জানায়। এই পাউডার আটকের বিষয়টি অনেককেই বিস্মিত করেছে। অনেকেরই আগে জানা ছিল না ফেনসিডিলের মূল উপাদান কোডিন ফসফেটের মূল্য সম্পর্কে। এই পাউডারের সাথে অন্যান্য উপকরণের মধ্যে রয়েছে চিনির ঘন সিরা, স্পিরিট ও কর্পূরের মতো একটি পদার্থ। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যারা এই উপাদান দিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করছে তাদের হাতে-কলমে কোনো শিক্ষা নেই। ফলে তারা অনেক ক্ষেত্রে কোডিন ও স্পিরিটের মাত্রা এত বেশি দিয়ে থাকে যে তাতে নেশাখোররা অল্প সময়ের মধ্যে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, কোডিন বাংলাদেশে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এটি তৈরি হয় আফিম থেকে। এটি দেশের বাইরে থেকেই নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, কোডিন পাউডার বাংলাদেশে আনকমন একটি আইটেম। অতীতে দেখা গেছে তরল ফেনসিডিল নিয়ে এসে তা বোতলজাত করে মাদক মার্কেটে সরবরাহ করা হতো। আগে যে ফেনসিডিল তৈরি হতো তাতে কোডিন ব্যবহার করা হতো না। বর্তমানে নেশা তৈরির জন্যই এটি ব্যবহার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোডিন ফসফেট আমদানি সহজ হওয়ায় ঘরে ঘরে ফেনসিডিল কারখানা গড়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। র্যাব ৩-এর মেজর মোহাম্মদ রেদওয়ানুল ইসলাম দৈনিক বাংলার অধিকার কে জানান, দেশের অভ্যন্তরে ফেনসিডিল তৈরি করে তা বাজারজাত করার বিষয়টি অত্যন্ত আতঙ্কের। যারা কোডিন দিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করছে তাদের শনাক্ত করতে র্যাব কাজ শুরু করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.