|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
জয়িতা সম্মাননায় ভূষিত রাজশাহীর পেপার বিক্রেতা খুকি – দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৮ ডিসেম্বর, ২০২০
আকাশ সরকার,রাজশাহী ব্যুরো: পেপার বিক্রেতা জোহরা দিল আফরোজ খুকি রাজশাহী জেলা পর্যায়ে জয়িতা সম্মাননার জন্য মনোনিত হয়েছেন। পেলেন রাজশাহীর একমাত্র নারী । বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাসিক কর্মকর্ত
তিনি ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোগে দাঁড়ানো’- ক্যাটাগরিতে এই মনোনয়ন পেয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর ও জেলা কমিটি এই মনোনয়ন দিয়েছেন। জেলা কমিটির একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে কুষ্টিয়ার মিলপাড়ায় সাব ডিভিশনাল আনসার অ্যাডজুটেন্ট হাফিজুর রহমানের (মৃত) অফিসার্স কোর্য়াটারে জন্মগ্রহণ করেন জোহরা দিল আফরোজ খুকি (৬০)। মাতা মৃত সামশুন নাহার। ১২ ভাই বোনের মধ্যে ১০ম ও বোনদের মধ্যে ৬ষ্ঠ খুকি।
পিতা হাফিজুর রহমান মারা যান ১৯৮১ সালের ১৩ জানুয়ারি। মা শমসুন নাহার মারা যান ২০০৩ সালের ২৯ মে ।
বড়ভাই মৃত মনসুর রহমান বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, বড় বোন মৃত ফাতেমা জামান সাবেক স্কুল শিক্ষক, মেজ বোন মৃত আমিনা রহমান সাবেক অডিট বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা দফতর, সেজ বোন ফিরোজা বেগম সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা, হাজেরা বেগম গৃহিণী, মৃত রোকেয়া বেগম গৃহীনি, আমিনুর রহমান খোকন মুক্তিযোদ্ধা, মৃত বজলুর রহমান বাদল ডিপ্লমা ইঞ্জিনিয়র, মৃত মিজানুর রহমান বাবুল ডিপ্লমা ইঞ্জিনিয়র, জোহরা দিল আফরোজ খুকি, ত.ই রওনাকুর রহমান টফি ব্যাংক কর্মকর্তা, মেহেরুন নেসা মেঘলা সুইজারল্যান্ড প্রবাসী।
১৯৬৮ সালে রাজশাহীর সাবিত্রি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন খুকি। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে সে সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে স্কুলে রাখতে অপারগতা জানালে খুকির পরিবার তাকে ১৯৭৫ সালে রাজশাহী নাজমুল হক উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয়। সেখানে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি। এরপর তার মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে আর পড়া হয় নি।
১৯৮৫ সালের জুলাই মাসে খুকির বিয়ে হয় নরসিংদির ব্যংকার মানিক খন্দকারের সঙ্গে। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে মারা যান মানিক খন্দকার। এরপর পিতার বাড়িতে এসে ভাইদের সঙ্গে থাকেন একই বাড়িতে ২০০৫ সালের অক্টবর পর্যন্ত।
পরিবারের সদস্যদের ভাষায় এসময় খুকি প্রচ- হিংস্র ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন। চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ হলে ১৯৯৫-৯৬ সালে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে কর্মব্যস্ত রাখতে তার সেজ বোনের স্বামী আজিজুর রহমান সাপ্তাহিক দুনিয়া পত্রিকা অফিসে আহমেদ শফির কাছে নিয়ে যান। শুরু হয় খুকির হকার জীবন।
২০০২ সালে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বণ্টন হয় । সম্পত্তি বণ্টনের পর নিজের জমি খাজনা খারিজ করে সেখানে ভাই বোনদের সহায়তায় বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন ২০০৪ সালে । ২০০৫ সালের নভেম্বরে নিজ বাড়িতে উঠেন।
২০০৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনালী সংবাদ পত্রিকা’র যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে তাকে সম্মাননা প্রদান করে সোনালী সংবাদ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ২০০৫-২০০৬ সালে ১১ নভেম্বর রাজশাহীর রোটারি ক্লাব অব পদ্ম ও রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন রাজশাহী সমাজে বিশেষ অবদান রাখায় তাকে সম্মাননা প্রদান করে। জোহরা দিল আফরোজ খুকি রাজশাহী নওহাটা এলাকার কিছু হতদরিদ্র নারী ও শিক্ষার্থীদের ৬টি সেলাই মেশিন, ৩ গাভী ও ১০ টি বাইসাইকেল দিয়ে সহায়তা করেন।
খুকির প্রতিবেশীরা জানান, খুকি দীর্ঘদিন থেকে হকারি করে পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন। তবে তাকে কখনো কারো কাছে কিছু চাইতে দেখিনি। কেউ যদি টাকা দিতে চায় তবে তিনি তা নেন না।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.