|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
শরীয়তপুর ও চাঁদপুর নৌ-রুটে তৈরি হবে মেঘনা সেতু, উপ-মন্ত্রী-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৬ ডিসেম্বর, ২০২০
চাঁদপুর- শরীয়তপুর মধ্যবর্তী স্থান মেঘনা নদীর দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ কিলোমিটার। এই নৌ-রুটে একটি সেতু বা সুড়ঙ্গপথ (টানেল) বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতির চাকা। যা দেশের এক প্রান্তের সঙ্গে অন্ত প্রান্তের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আনতে পারে পরিবর্তন।
এতে সময়ের পাশাপাশি তিনটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সড়কপথে পণ্য পরিবহনে সময় কমিয়ে দিবে। এমনই একটি সেতু বা টানেল নির্মাণের কথা ভাবছে সরকার। যে পথ দিয়ে রেল চলাচল করবে। এমনই এক স্বপ্ন স্বপ্ন দেখছেন চাঁদপুর-শরীয়তপুর দুই পাড়ের জনপ্রিয় দুই সাংসদ।
চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ এর স্থান পরিদর্শন কালে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম এমপি। তিনি বলেন, আমার বড় বোন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির সাথে আমার কথা হয়েছে। চাঁদপুর-শরীয়তপুর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য আমরা এমন একটি কাজ করে যেতে চাই যার জন্য মানুষ আমাদেরকে মনে রাখবে।
উপ-মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। যার ফলে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। এবারে আমরা স্বপ্ন দেখছি মেঘনায় নদীতে চাঁদপুর- শরিয়তপুর সেতু বা টানেল করব। যা দিয়ে রেল চলাচল করবে। এ বিষয়ে আমাদের সমীক্ষা কাজ চলছে। আমার বড় বোন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির সাথে আমার কথা হয়েছে। আমরা দুজন মিলে এই স্বপ্নটি বাস্তবায়নে কাজ করব। আমরা আশা করছি এই সরকারের শেষদিকে হলেও মেঘনা সেতু অথবা টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবো।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়, মেঘনা নদীর এক প্রান্তে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলুবাজার ফেরিঘাট আর অন্য প্রান্তে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট। দুই ফেরিঘাটের মধ্যে দূরত্ব নদী ও চর মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার। এখানে সেতু নির্মাণের সমীক্ষার জন্য দরপত্রও আহ্বান করেছে সেতু বিভাগ। এ দুই ঘাটের দুই প্রান্তেই আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। তার ওপর আবার পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণের ডিপিপি প্রস্তুত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
সূত্রটি থেকে আরো জানা যায়, দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদকালে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০০১ সালে জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) দেশে যে পাঁচটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা দেয় তার মধ্যে শরীয়তপুরের আলুবাজার ফেরিঘাট থেকে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ছিল।
আরও যে চারটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়, তারই একটি পদ্মা সেতু যা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত নির্মাণের কাজ এখন চলছে। সড়ক খাতের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলুবাজার থেকে হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত নদী ও চর মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার সেতু বা টানেল নির্মাণ করা হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে।
একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের পণ্য সড়কপথে পরিবহনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে যেহেতু এটি একটি বৃহৎ প্রকল্প এবং ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ তাই এখন ওই ফেরিপথে ভারী ফেরি দিয়ে যান পারাপারের ব্যবস্থা করা হলে তা-ও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। একই সঙ্গে দ্রুত ওই পথে সেতু বা টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেটি ধীরে ধীরে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা যাবে। এজন্য এখনই সরকারের একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলুবাজার থেকে হরিণা ঘাট পর্যন্ত সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সেতু বিভাগ দরপত্র আহ্বান করে গত ডিসেম্বরে। এতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। সাধারণত ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় আবেদন জমা দেওয়ার জন্য।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলুবাজার ফেরিঘাট থেকে হরিণাঘাট ফেরিঘাট পর্যন্ত সেতু বা টানেলের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার হলেও এখানে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য মাত্র ২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। বাকিটা চর এলাকা। এখানে নদীর গভীরতাও প্রায় ৬৫ মিটার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলুবাজার থেকে হরিণাঘাট পর্যন্ত সেতু বা টানেল নির্মাণ করা হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২২ জেলা, সিলেটের চার জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে।
এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম বা সিলেটের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ করতে কাউকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে হবে না। ফলে রাজধানীর ওপর যানবাহনের চাপ যেমন কমবে, তেমন মানুষের চাপও কমবে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের যানবাহন বা লোকজন ঢাকা না গিয়েই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন।
আর চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে পণ্য সড়কপথে পরিবহন করা সহজ হয়ে যাবে। বর্তমানে এ তিন সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ করতে হলে অবশ্যই রাজধানীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তবে যেহেতু এ মুহূর্তে সেতু বা টানেল স্থাপন করা যাচ্ছে না তাই আরও বেশিসংখ্যক ফেরি এ রুটে চালানো গেলে যানবাহনের চাপ রাজধানীর ওপর অনেকাংশে কমে আসবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর মাওয়া-জাজিরা রুটে চলাচলকারী বড় আকারের ফেরিগুলোকে শরীয়তপুরের আলুবাজার থেকে চাঁদপুরের হরিণাঘাট নৌরুটে চালানো যেতে পারে। এতে সময় যেমন বাঁচবে তেমন পণ্য পরবিহনে ব্যয়ও কমে আসবে।
এদিকে সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাজিরার নাওডোবা থেকে শরীয়তপুরের আলুবাজার পর্যন্ত চার লেনের প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা জরুরি। এর মধ্যে নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ইতিমধ্যে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শরীয়তপুর থেকে আলুবাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত বিদ্যমান আঁকাবাঁকা ৩১ কিলোমিটার সড়ককে দুই লেনের আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে উন্নীত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এ সড়কের দরপত্র ইতিমধ্যে আহ্বানও করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সড়ককে সোজা করে করলে দূরত্ব কমে আসবে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে। এটিকে আঞ্চলিক সড়ক না করে চার লেনে উন্নীত করে জাতীয় মহাসড়ক করলে তা হবে বেশি কার্যকর। কারণ মেঘনার ওপারে চাঁদপুরের হরিণাঘাট থেকে হাজীগঞ্জ-কুমিল্লা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক বিদ্যমান রয়েছে। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী-চৌমুহনী-ফেনী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হওয়া বিদ্যমান সড়কটিও আঞ্চলিক মহাসড়ক; যা আগামীতে চার লেনে উন্নীত হবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.