|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
রাজশাহী মহানগরীতে বৈধ মদ অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ১২ নভেম্বর, ২০২০
সমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে রাজশাহীকে বলা হয় শিক্ষা নগরী । রাজশাহীর প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে শিক্ষার ব্যাপারটি অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। । এ অঞ্চলের প্রাচীন সাংস্কৃতি গড়ে ওঠে হাজার বছরের পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভর করে। পাল রাজার সময় (৭৮১-৮২১ খৃষ্ঠাব্দ)। নওগায় গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধ মহাবিহার। যা ছিল সে সময়কার আর্ন্তজাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলার স্বাধীন সুলতান নুশরত শাহের আমলে রাজশাহীর বাঘায় মক্তব মাদরাসা খানকা গড়ে ওঠে। ঐ সময় ১৮২৮ সালে ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল নাম পরিবর্তন হয়ে রাজশাহী কলেজ হয়। বাউলিয়া হাইস্কুলের নাম পরিবর্তন করে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল হয়।তাই তো আজ রাজশাহী শিক্ষানগরীর তালিকায় আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছে। সে সাথে আধুনিক রাজশাহীর রূপকার রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামানের হাতে ধরে এই নগরী পেয়েছে গ্রিন রাজশাহীর খেতাব। যা শুধু আমাদের গর্ব নয় বরং আমাদের অহংকার।
কিন্তু যেখানেই উন্নয়ন সেখানেই বাধা দেয়ার জন্য সৃষ্টি হয় সিন্ডিকেট। এর মধ্যে অন্যতম সিন্ডিকেট হল দেশি মদ বা বাংলা মদ বিক্রেতারা। রাজশাহীতে সরকার অনুমোদিত মদের দোকান ও বারগুলোর বৈধ মদ দিয়েই চলছে অবৈধ ব্যবসা। সরকারের অনুমোদিত এসব মদের দোকানে নিয়ম না মেনেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা।
অভিযোগ রয়েছে বার বা দোকান থেকে শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যাক্তিরাই মদ কিনতে পারার কথা। কিন্তু রাজশাহী সাহেব-বাজার জিরো পয়েন্টের ডিকে বসাক বা (কেরু ফরেন লিকার সপ) এই নিয়ম নীতি মালার তোয়াক্কাই করেননা। শিশু হোক আর কিশোর কিংবা যুবক হোক বা যুবতী সবার কাছে ডিকে বসাকের এই দোকানটি উন্মুক্ত।
কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায় অন্য চিত্র- এই বৈধ দোকানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি চক্র। যারা ছোট ছোট পরিসরে বিভক্ত হয়ে নগরীর বিভিন্ন আবাসিক কিংবা অনাবাসিক এলাকায় ব্যবসা সম্প্রসারন করেছেন। এর মধ্যে রাজশাহী আলুপট্টীতে অবস্থিত স্বচ্ছ টাওয়ার পেছেনে বিক্রি হয় এই মদ। আবার রাজশাহী বাস টার্মিনাল এলাকায় রহমান নামের একজনের মাধ্যমে বিক্রি হয় দেশী -বিদেশী মদ। পার্কের গেটে সুইপার পট্টির সংলগ্ন এলাকায় বিক্রি করে আসাদুল নামের এক ব্যাক্তি।
মূলত এই দালালদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন জুয়েল নামের এক ব্যাক্তি। তার বাড়ী রানীবাজার এলাকায়। দেশি মদের আড়ালে বিদেশী মদ, বিদেশী বিয়ার ,রাশিয়ান শ্যাম্পেন সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ আবার কখনো কখনো বিদেশী মদ বিক্রি না হওয়ার কারনে তা মেয়াদত্তীর্ন হওয়ার পরেও নতুন লেবেল লাগিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে তা বিক্রি করা হয়।এই জন্যই তো স্থানীয় মাস্তান থেকে পুলিশ মহল ম্যানেজ করেন এই জুয়েল। আর এই সকল ব্যাক্তির কাছে রক্ষিত মেয়াদোত্তীর্ন মদ পান করে রাজশাহী নগরীতে রাশিয়ান নাগরিক সহ বেশ কয়েকজন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণ যায়। কিন্তু তারপর আড়ালে থেকে যান কথিত মদের সাব ডিলার কিংবা এই দালালরা।
সরেজমিন ডিকে বসাকে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের বেশিরভাই অননুমোদিত যুবক। অনেক শিক্ষার্থীও মদ কিনছে এগুলোতে। এনিয়ে কোন রকম তদারকি নেই রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। অভিযোগ রয়েছে বার থেকে মদ কিনে বাইরে বিক্রি করা হয়। আর এসব মদ কিনে সাধারণত শিক্ষার্থীরা যারা আবার কিশোর গ্যাং নামে অভিহিত করা হয়।
সাহেব বাজারের ডিকে বসাকের মদের দোকানের সামনে কথা হয় এক মদ ক্রেতা যুবকের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বললেন, ‘আরে ভাই, পাঁচ বছর ধরে খাই। কোনোদিন তো কেউ এই পারমিট দেখতেও চাইল না। এখানে যারা আসে তাদের কতজনের পারমিট আছে? আর এই মদ খাওয়ার লাইসেন্স কে করতে চায় বলেন? ’তাছাড়া ১০০/২০০ বেশী টাকা দিলেই বয়সটা কোন বিষয় নয়।
এদিকে ডিকে বসাকের মদের দোকানের সপের মালিক বাবু লাল জানান, সবাই কোন না কোনভাবে এই ব্যবসা করছে। এই ভাবে ব্যবসা না করলে তো বিক্রেতা পাওয়া যাবে না। তখন আমাদের লাইসেন্স-ই বাতিল হয়ে যাবে।
আর তাই তো সেই জুয়েলের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন এলাকায় এলাকায় কথিত মিনি মদ বার। কখনো লন্ড্রির দোকানে , কখনো সুইপার কলোনীতে,কখনো পানের দোকানে মাধ্যমেই বিক্রি হচ্ছে দেশী বিদেশী কিংবা মেয়াদত্তীর্ন মদ। যা গোগ্রাসে খাচ্ছে তরুণ সমাজ,শুধু তাই না আজ কিশোর গ্যাঙ্গের কালচারের পেছনে এই মদই দায়ী অনেকাংশে।
বিধায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল করে করছেন এখনই যদি এই ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ না করা যায় তবে ওই দিন খুব বেশী রুরে নেই যেইদিন এলাকায় এলাকায় জুয়েল নামের মদের দালালের জন্ম হবে।সুত্র উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.