|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অনেক হাসপাতাল ও চিকিত্সাসেবা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ৭ অক্টোবর, ২০২০
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অনেক হাসপাতাল ও চিকিত্সাসেবা প্রতিষ্ঠান যখন দুর্নীতিগ্রস্ত, সেই মুহূর্তে নাক-কান-গলা (ইএনটি) ইনস্টিটিউট ব্যতিক্রম। দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে এই ইনস্টিটিউটটি। কেনাকাটায় সরকারি বরাদ্দে সাশ্রয় করেছে ইএনটি ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে সব বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউটের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে।
নামমাত্র খরচে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় নাক-কান-গলা (ইএনটি) ইনস্টিটিউটে মিলছে বিশ্বমানের চিকিত্সা। এমনকি রক্তনালির টিউমার, প্যারেটিড গ্রন্থির টিউমার, কানের পর্দা লাগানো, নাকের পলিপ ও হাড়ের অপারেশন, সাইনাস ক্যানসারের অধুনিক অ্যানডোসকোপিক অপারেশন, শ্বাসনালির ক্যানসার, থাইরয়েড গ্লেন্ডের ক্যানসার, গলগণ্ড এবং জিহ্বার টিউমারের মতো জটিল অপারেশনও করা হচ্ছে বিনা খরচে। গলা না কেটে অ্যানডোসকপির মাধ্যমে থাইরয়েড অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও নাক, কান, গলার সব ধরনের চিকিত্সাসেবা ছিল স্বাভাবিক। কোনো সিডিউল অপারেশন বন্ধ থাকেনি। জাতীয় নাক-কান-গলা (ইএনটি) ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু হানিফ বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যেও ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় নাক-কান-গলা (ইএনটি) ইনস্টিটিউটকে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবেও দাবি করেন তিনি। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, দেশে কি পরিমাণ নাক, কান ও গলার রোগী রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। সরকারি হাসপাতালে আগত রোগীদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ ভাগ নাক-কান-গলার রোগী। আর মোট ক্যানসার রোগীর ৩০ ভাগ হেকনেক ক্যানসারে আক্রান্ত।
করোনা দুর্যোগের মধ্যে মাস্ক কেলেঙ্কারিসহ যেখানে স্বাস্থ্য খাতে একের পর এক দুর্নীতি বের হয়ে এসেছে, তখন স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট। কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটের একটি টেন্ডারে মোট ১ কোটি ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। চলতি বছর একধাপ উন্নত আরো ২৮টি কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। জন্ম থেকে বধির যারা কানে শোনে না ও কথা বলতে পারে না তাদেরকে বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সংযোজন করা হয়।
জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট দেশের একমাত্র সরকারি চিকিত্সা-প্রতিষ্ঠান, যেখানে বহির্বিভাগে রোগী দেখেন বিশেষজ্ঞ (কনসালট্যান্ট) চিকিত্সকরা। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে চলে একটানা রোগী দেখা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১৩ সালের ১৯ জুন থেকে সেবা দেওয়া শুরু হয় নাক, কান ও গলার বিশেষায়িত এই চিকিত্সা-প্রতিষ্ঠানটিতে। প্রথমদিকে সীমিতভাবে শুধু বহির্বিভাগে চিকিত্সাসেবার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে বহির্বিভাগের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা দেওয়া হচ্ছে জরুরি চিকিত্সাসেবা। দেশে নাক কান গলার চিকিত্সাব্যবস্থা খুবই সীমিত। আগে অনেক রোগী পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে যেত। এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর বিদেশ যাওয়ার হার কমে গেছে। এখানে বহির্বিভাগে একজন রোগী মাত্র ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে নাক, কান অথবা গলার যে কোনো রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের সেবা পাবেন। প্রয়োজন হলে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে থাকা অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকরাও রোগী দেখেন। বিভাগীয় প্রধানরা ইএনটি ওয়ার্ক স্টেশনের (ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে যে ধরনের চিকিত্সা যন্ত্রপাতি দিয়ে রোগ নির্ণয় করা হয় সেই ধরনের যন্ত্রপাতি) মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করে চিকিত্সা দেন অথবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদি কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, তাহলেও চিকিত্সাসেবা পেতে খুব বেশি অর্থ খরচ করতে হয় না। এ জন্য ভর্তি হতে লাগে মাত্র ১৫ টাকা। এরপর যে কোনো পরীক্ষা থেকে শুরু করে অপারেশন করা হয় বিনামূল্যে। এমনকি রোগীকে ওষুধ (সরকার থেকে যেসব ওষুধ সরবরাহ করা হয়) ও তিন বেলা খাবারও সরবরাহ করা হয়। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির ১০০ বেডের মধ্যে ৬০টি বেড ফ্রি সেবার আওতায় রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-৬কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ, গরিব ও প্রতিবন্ধীরা এই ফ্রি সেবা পেয়ে থাকেন। এছাড়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) জন্য আছে দুইটি কেবিন। এ দুইটি কেবিনের চিকিত্সাসেবাও সম্পূর্ণ ফ্রি। বাকি ৩৮টি বেডের রোগীদের অর্থের বিনিময়ে চিকিত্সাসেবা নিতে হয়। এর মধ্যে ২৬টি পেয়িং বেড। এই বেডের জন্য রোগীদের প্রতিদিন ২৭৫ টাকা দিতে হয়। আর অপারেশনের ক্ষেত্রে বড় অপারেশনের জন্য ১ হাজার টাকা এবং ছোট অপারেশনের জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া আছে ১০টি নন-এসি ও দুইটি এসি কেবিন। নন-এসি কেবিনের ভর্তি চার্জ ৪০০ টাকা এবং এসি কেবিনে ১ হাজার টাকা। এই দুই কেবিনের রোগীদের অপারেশনের ক্ষেত্রে বড় অপারেশনে ২ হাজার টাকা এবং ছোট অপারেশনে ১ হাজার টাকা দিতে হয়।
সংগ্রহ ইত্তেফাক
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.