|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে একসঙ্গে কাজ করতে চায় ভারত-জাপান-দৈনিক বাংলার অধিকার
প্রকাশের তারিখঃ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
চীনের আগ্রাসী ও জোরালো তৎপরতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। তা মোকাবিলার জন্য ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানসহ বেশ কিছু দেশ নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ঠিক সে সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে একসঙ্গে কাজ করতে চাইছে ভারত ও জাপান। জয়শঙ্কর শুক্রবার বলেন, তৃতীয় একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতার ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করতে চাইছে ভারত ও জাপান। এ খবর দিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস।
এতে বলা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প আধুনিকায়নের দিকে দৃষ্টি রাখে ইন্ডিয়া-জাপান এক্ট ইস্ট ফোরাম। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উল্লেখযোগ্য সংযুক্তি আছে বলে ‘ইন্ডিয়া-জাপান: টাইম টু সিজ দ্য অপরচুনিটি’ শীর্ষক থিমের ওপর এক রিপোর্ট উন্মুক্ত করতে গিয়ে এসব কথা উল্লেখ করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বাক্ষর হয়েছে একুইজিশন এন্ড ক্রোস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ)।
এর অধীনে রয়েছে ভারত ও জাপানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পারস্পরিক সরবরাহ ও সার্ভিস। একই সঙ্গে এই চুক্তি পুরো এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে।
জয়শঙ্কর আরো উল্লেখ করেন, তৃতীয় দেশে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে এখন প্রাকটিক্যাল পর্যায়ে চলে এসেছে ভারত ও জাপান। তার ভাষায়, শ্রীলঙ্কায় আমরা এর সামান্য সম্পন্ন করেছি। আমরা এখন দেখছি সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে আরো ঘনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে কাজ করতে পারি কিনা।
এরই মধ্যে এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান), ইস্ট এশিয়া সামিট এন্ড দ্য কুয়াড্রিলেটারেল ডায়ালগের অধীনে ভারত ও জাপান ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে উল্লেখ করে জয়শঙ্কর আরো বলেন, তারা রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য এবং প্যাসিফিক আইল্যান্ডভুক্ত দেশগুলোতে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারেন। গত সপ্তাহে স্বাক্ষরিত এসিএসএ চুক্তিকে এ সময় তিনি একসঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা ও মানসিকতার একটি অত্যন্ত প্রাকটিক্যাল ম্যানিফেস্টেশন বলে আখ্যায়িত করেন। জয়শঙ্কর বলেন, আমি অত্যন্ত আস্থাশীল যে- এই চুক্তি এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য উভয় দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় বিবর্তন নিয়ে আসবে। দুই দেশই ইন্দো-প্যাসিফিকের আখ্যানে বিশ্ব ও এশিয়ায় ভারসাম্য স্থাপনে সচেষ্ট রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা দ্রুত উল্লখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, জাপান হলো একমাত্র দেশ, যার সঙ্গে ভারতের বার্ষিক সামিট হয় এবং ২+২ ডায়লগ হয় প্রতিরক্ষাা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ মহামারি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তাকে যুক্ত করেছে। সাপ্লাই চেইনেও কৌশলগত স্বশাসনের ধারণা এসেছে। এটি হতে পারে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতার এক নতুন যুগ।
শুক্রবারের ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর চীনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, এশিয়ার উত্থানের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যদি বিশ্ব রাজনীতিতে আপনি এশিয়াকে আরো বড় স্থান দিতে চান, তাহলে এশিয়ার সব দেশকে একসঙ্গে মিলে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে একত্রিত হতে হবে, যদি তারা তাদের শক্তিকে ইতিবাচক উপায়ে ব্যবহার করতে চায়।
ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাপান মিশনের ডেপুটি প্রধান তোশিহিদে আন্দো। তিনি বলেন, মেক ইন ইন্ডিয়া এবং মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড উভয় কর্মের সঙ্গেই অব্যাহত অংশীদার জাপান। উন্নত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ভারত আরও শক্তিশালী হবে। বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের প্রাণকেন্দ্র হতে ভারতের যে অন্বেষণ তাতে বড় ভূমিকা রাখতে উদগ্রিব হয়ে আছে জাপানের ব্যবসা খাত। গত বছর ভারতে সচল জাপানি ফার্মের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫৪টিতে। ভারতে ব্যবসা করতে গিয়ে জাপানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তার একটি তালিকা দেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে জটিল আইন ও আয়কর ব্যবস্থা, বিলম্বে পাওনা পরিশোধ করা, জটিল শ্রমিক ইস্যু, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো প্রভৃতি। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত বিশ্বে জাপান ও ভারত শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনতে পারে সমমনা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে।
পাঠকের মতামত
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.