সিদ্দিকুর রহমান নয়ন:
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে গরুর বাছুর ক্ষেতের ধানগাছ খাওয়াকে কেন্দ্র করে দু'ভাইয়ের সংঘর্ষে অন্তত ৬ ব্যক্তি আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের রাঢ়া পশ্চিমপাড়া, পাটোয়ারী বাড়িতে এঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ওই বাড়ির মৃত আমজাদ আলীর পু্ত্র রফিকুল ইসলামের (৬৮) গরুর বাছুর বড় ভাই শহিদুল্লাহ্ পাটোয়ারীর জমির ধানগাছ খেয়ে ফেলে। এনিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল মারামারিতে অন্তত ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। তারা হলেন, রফিকুল ইসলাম (৬৮), তার স্ত্রী সামছুন নাহার (৫০) ও জামাতা সিফাত হোসেন (২৯)। অন্যদিকে জান্নাতুল আফরোজা মনি (২৮), তার বাবা শহিদুল্লাহ্ পাটোয়ারী, বড় ভাই মোশারফ হোসেন (৩৮)।
এব্যাপারে শহিদুল্লাহ্ পাটোয়ারী বলেন, রফিকের গরু আমার ক্ষেতের ধান খেয়েছে তা কোনো অসুবিধে নেই। এবিষয়ে আমি তাদেরকে কিছুই বলিনি। শুধু বাড়িতে এসে বলেছি ধান খাওয়ার ঘটনা।
এতেই তারা গালমন্দ শুরু করে। এমনকি তারা আমাদের মারতে দৌড়ে আসে। আমার বর্তমান বয়স ৯৫/১০০ বছর, তারা আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমার কুমারী কন্যা জান্নাতুল আফরোজা মনি (২৮) আমাকে বাঁচাতে আসলে রফিকের মেয়ের জামাই সিফাত তার মাথায় কুড়াল দ্বারা আঘাত করে। এতে মনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আমার ছেলে মোশারফ ছুটে আসে। এসময় তারা তাদের হাতের দা দিয়ে আমার ছেলের কান কেটে দেয়। আমি এবং আমার ৪ ছেলে নিজ এলাকায় শান্ত প্রকৃতির বলে পরিচিত। অথচ আমার ভাই ও তার পরিবার আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।
তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।
অপরদিকে আহত রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। আমাদের দেখভালের কেউ নেই। শহিদুল্লাহ্ আমার আপন বড় ভাই। তার অত্যাচারে শুধু আমরাই নই এলাকার অনেকেই অতিষ্ঠ। তার ছেলেদের অসামাজিক কর্মকান্ডে এখন পর্যন্ত এলাকায় বহু মেল দরবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের অপকর্মে জরিমানা প্রদান করে তাদের সাহস বেড়ে গেছে। তাদের কোনো শায়েস্তা হয়না।
তাদের মেঝভাই হাবীবুল্লাহ পাটোয়ারী (৮২) বলেন, শহিদুল্লাহ্ আমাদের বড় ভাই হলেও তিনি কখনই ওই দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি। বরং কিছু থেকে কিছু হলেই আমাদের মারতে তেড়ে আসেন। আমরা মান-সন্মানের ভয়ে অনেক সময় মুখ বন্ধ করে রাখি। প্রতিবারের ঘটনায় সে নিজেই অপরাধ মূলক কাজ করে আবার গুছিয়ে মিথ্যাচার প্রচার করে রেহাই পেতে চায়। প্রকৃত পক্ষে সে ভালো মানুষ নয়।
ওই গ্রামের খন্দকার বাড়ির ভুলু বেগম বলেন, কিছুদিন আগে শহিদুল্লার ছেলে আমাদের সাথে ঝামেলা করে ১০ হাজার টাকা মুছলেকা প্রদান করেছে। তারা এলাকায় সন্ত্রাসী মনোভাব নিয়ে চলাফেলা করে। তারা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের মান্য করে না। উল্টো হুমকি ধমকি প্রদান করে। তারা এলাকায় লাটের দুলাল হিসেবে রাম রাজত্ব করতে চায়। তাই তাদের এমন সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করতে প্রসাশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এলাকাবাসী বলেন, মৃত আমজাদ আলীর ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে শহিদুল্লাহ্ ছোট বেলা থেকেই বেপরোয়া। এমন বেপরোয়ার কারনে তার ছেলেরাও সঠিক ধারায় প্রতিপালিত হতে পারেনি। সামান্য কিছু নিয়ে তারা বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ছাড়ে। তাদের ভয়ে এলাকার অনেকেই মুখ বন্ধ রাখে। তবে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।